Sunday 12 July 2020

গল্প প্রবন্ধের গাছ

স্বাধীনতা দিবস ( প্রবন্ধ )
                             ---শেখ আসমত 

স্বাধীনতা দিবস আমাদের সবার জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।। ভারতের জাতীয় জীবনের পরম আকাঙ্ক্ষিত ও  পবিত্রতম দিন| কত শত শহীদের রক্তে স্নান করে এবং বহু ব্যথা-বেদনার  স্মৃতি বহন করে, এই পবিত্রতম দিনটি  1947 সালের 15 ই আগস্টের স্মরণীয় প্রভাতে আমাদের জাতীয় জীবনে আবির্ভূত হয়েছিল| পরাধীনতার অন্ধকার অপসারিত করে 15 ই আগস্টের সেই শুভ প্রভাতে ভারত গগনে যে স্বাধীনতার শিশু সূর্য উদিত হয়েছিল, তা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে|

1757 সালের 23 শে জুন পলাশীর আম্রকুঞ্জে ভারতের যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, দ্বি  শতাব্দীর অবসানে অম্লান গৌরবে সেদিন পুনরায় উদিত হয়| ভারতের এই দুই শতাব্দীর ইতিহাস তার নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস| পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ- বিভিন্ন সীমান্তে সে প্রতিরোধের ব্যূহ রচনা করেছে|

1857 সালের ভারতীয় সিপাহীদের সংহত স্বাধীনতা সংগ্রাম ব্যর্থ হলে নতুনতর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হলো ভারত| রাজা রামমোহন রায়,  বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মধুসূদন দত্ত, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ যে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন, তা জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে বিকশিত হয়ে উঠল| তারপর অসহযোগ এর অস্ত্র হাতে জাতীয় কংগ্রেসের পুরোধায়  এসে দাঁড়ালেন মহাত্মা গান্ধী| একদিকে অহিংস সংগ্রাম, অন্যদিকে অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বিপ্লবী দলের রক্তাক্ত সংগ্রাম| তার সর্বশেষ পরিণতি দেখা গেল একদিকে গান্ধীজীর ভারতছাড়ো আন্দোলনে, অন্যদিকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ  ফৌজ এর ভারত আক্রমনে |
তারপর ইংরেজকে ভারত ছাড়তে হলো| কিন্তু সে দিয়ে গেল এক সর্বস্বান্ত খন্ডিত ভারত| রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের পর শুরু হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভের সংগ্রাম| সেই সংগ্রাম এখনো চলছে| সে সংগ্রাম আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংগ্রাম| এই ক'বছরে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আত্মসন্তুষ্টির কোন কারণ নেই| দারিদ্র্য অশিক্ষা অস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে ভারতের এই সংগ্রাম চলবেই| 15 ই আগস্ট সেই আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক|





হিন্দু

                      আবদুস সাত্তার বিশ্বাস

     দীপ আর সৌগত অন্তরঙ্গ দুই বন্ধু।বন্ধুত্বে তাদের কোনোদিন ফাটল ধরেনি।কিন্তু আজ হঠাৎ করে প্রবল ঝড়ে গাছের ডালপালা যেভাবে দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ে সেইভাবে তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে পড়ল।দীপ যখন সৌগতকে বলল,"চলো সৌগত,একটা সিগারেট আছে দু-জনে খেয়ে আসি।"
    সৌগত তখন বলল,"না,যাবোনা।তোমার সিগারেট তুমি খাও গে।আমার খাওয়ার দরকার নেই।"
    সৌগতর এমন আচরণে দীপ বলল,"সে কি! খাবেনা কেন?কি হয়েছে?" 
    "যাই-ই হোক হয়েছে।তুমি আমাকে কথা বলবে না।"
    "কথা বলবো না!"দীপ অবাক হল।
    "না,বলবে না।"
   "কিন্তু,কেন?"দীপ জিজ্ঞেস করলে পরে সৌগত বলল,"তোমার সঙ্গে আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আমার সঙ্গেও তোমার আর সম্পর্ক নেই।তুমি আর আমার বন্ধু নও।আমিও আর তোমার বন্ধু নই।"সৌগত একেবারে দীপের মুখের উপর যখন কথা গুলো বলল তখন আর বন্ধুত্ব থাকে?থাকল না।ভেঙে পড়ল।ফলে বন্ধুত্ব ভেঙে পড়ার বেদনায় দীপের মন খারাপ হল।এবং তার চোখে জল চলে এল।পরে দীপ চোখের জল মুছে বলল,"বেশ,কথা বলবো না।"
     "হ‍্যাঁ,বলোনা।"কিন্তু সৌগতর মনে কোনো কষ্ট নেই।আঘাত যে দেয় তার তো মনে কোনো কষ্ট থাকে না।আঘাত যে পায় কষ্ট তার হয়।ফলে সৌগতর চোখে,মুখেও মন খারাপের তেমন কোনো ছাপ দেখা গেল না।বরং সে বলল,"তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।"
     শুনে দীপ তো বিস্ময়ে হতবাক।তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে!দীপ এতে থেকে আরো বেশি ব‍্যথা পেল।এবং পরে সে যখন কি ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইল সৌগত তখন বলল যে,দীপ তাদের ঠকিয়েছে।সে তাদের ব‍্যাপক ক্ষতি করেছে।ফলে দীপের সঙ্গে তারা আর মিশবে না। দীপও যেন তাদের সঙ্গে আর না মিশে।কোনোদিন না মিশে।কিন্তু কিভাবে ক্ষতি করেছে সেটা বলল না।

                                 দুই

     কোনো কিছুই এমনি এমনি ভেঙে পড়ে না। ভেঙে পড়ার পিছনে অবশ্যই কারণ থাকে।তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে পড়ার পিছনেও নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে।সৌগত সেটা জানে।দীপকে বলেনি।যে করে হোক দীপকে সেটা জানতে হবে। জানতেই হবে।

                                  তিন

     কামিনী সৌগতর লাভার।দীপের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।কেননা দীপ একবার তার উপকার করেছিল।বড় একটা উপকার।কামিনীর মায়ের তখন অসুখ হয়েছিল।কি একটা অসুখ। কামিনী হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। ডাক্তার অপারেশন করতে হবে এবং ব্লাড লাগবে বলেছিল।কামিনী ব্লাডের জন্য ছোটাছুটি করেছিল।অনেক ছোটাছুটি।করেও সে কোত্থাও থেকে ব্লাড আনতে পেরেছিল না।সেকথা সে তার সকল আত্মীয়স্বজনকে জানিয়েছিল।জানানোর পর তারা সবাই ব্লাড দিতে ছুটে এসেছিল। কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয়।কামিনীর মায়ের ব্লাডগ্রুপের সঙ্গে কারও ব্লাডগ্রুপ মিলেছিল না। কারও না।একজনেরও না।শুধু কামিনীর ব্লাডগ্রুপ মিলেছিল।কিন্তু ডাক্তার তার শরীরে রক্ত কম বলে ব্লাড নিয়েছিল না।ফলে কামিনী হাসপাতালের বাইরে গাছতলায় মন খারাপ করে বসে ভাবছিল। ভাবছিল আর ভাবছিল।শুধু ভাবছিল।ভাবনা তার শেষ হচ্ছিল না।দীপ ওইসময় হাসপাতালেই ছিল।নার্সিং কোয়ার্টারের দিকে।ওখান থেকে কামিনীকে দেখে সে চিনতে পেরেছিল।পেরে কামিনীর কাছে এসেছিল।----"কামিনী,তুমি!"
      "মা হাসপাতালে ভর্তি আছে।"কামিনী বলেছিল।তারপর দীপকে জিজ্ঞেস করেছিল,"তুমি?"
     "আমার মা এই হাসপাতালের নার্স।মায়ের সঙ্গে একটু দেখা করতে এসেছিলাম।দেখা করে এখন বেরিয়ে যাচ্ছি।"দীপ বলেছিল।
    "তাই নাকি!"শুনে কামিনী আনন্দিতা হয়েছিল। ও বলেছিল,"তোমার মাকে আমার কথাটা একটু বলে দিও।তাহলে মায়ের দেখাশোনাটা ভালো হবে।"
     "সে বলে দেবো।"বলে দীপ বলেছিল,"এখানেই আমাদের বাড়ি।চলো না আমাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসবে!'
     কামিনী বলেছিল,"মনের অবস্থা ভালো নেই, যাবোনা।"
     দীপ তখন শুধিয়েছিল,"মাসিমার অবস্থা এখন কেমন?"
     কামিনী কাঁদো কাঁদো হয়েছিল,"খুব একটা ভালো না।"
     "কি অসুখ?" 
     "অসুখের নাম জানি না।"
     "অসুবিধা?"
     "ব্লিডিং,পেটে ব‍্যথা।"
     "ডাক্তার কি বলছে?"
     "অপারেশন করতে হবে।এবং ব্লাড লাগবে।"
     "ব্লাড পাচ্ছ না?"
     "না।কোত্থাও পাচ্ছি না।"
     "ব্লাড দেওয়ার মতো তোমার কোনো আত্মীয়স্বজন নেই?"
     "আছে।সবাই এসেছিল।কিন্তু---"
     "কিন্তু কি?"
     "মায়ের ব্লাডগ্রুপের সঙ্গে কারও ব্লাডগ্রুপ মিলল না।"
     "তোমার?"
     "আমার মিলল।কিন্তু শরীরে রক্ত কম বলে ডাক্তার আমার রক্ত নিল না।"
     "এখন কি করবে তাহলে?"
     "নির্জন গাছতলায় বসে সেটাই ভাবছি।এখন কি করবো।যত ভাবনা হয়েছে সব আমার।বাবা থাকলে এত ভাবনা হতো না।বাবা সব সামলে নিত।মাথার উপর কেউ নেই তো।"
     "তার মানে!"
     "বাবা বেঁচে নেই,মারা গেছে।"
     "দাদা?"
     "দাদা নেই।আমি প্রথম।একটা ভাই আছে। ছোট।সে আর কি করবে?"
     কামিনীর কথাগুলো শুনে দীপের মনে ব‍্যথা লেগেছিল।এবং মায়া হয়েছিল।খুব মায়া। কামিনীর জন্য সে তখন কিছু করতে চেয়েছিল। বলেছিল,"ব্লাডের জন্য তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবেনা,কামিনী।আমি ব্লাডের ব‍্যবস্থা করে দিচ্ছি। চলো,ভিতরে যাই। মাসিমা কোন বেডে আছে গিয়ে দেখি।"কামিনীর সঙ্গে দীপ ভিতরে এসে দেখেছিল ফিমেল ওয়ার্ডের বাইশ নম্বর বেডে রয়েছে।দুই হাতে দুটো স‍্যালাইন চলছে।মড়ার মতো পড়ে রয়েছে।দেখে দীপের চোখ দুটি ভিজে গিয়েছিল।ব্লাডের সে ব‍্যবস্থা করতে পারবে।কিন্তু পেশেন্টের যা অবস্থা এই মুহূর্তে ব্লাড লাগবে। নাহলে যখন তখন মারা যেতে পারে।সুতরাং দীপ ব্লাডের ব‍্যবস্থা না করে নিজে ব্লাড দিয়েছিল।তার ব্লাডগ্রুপ কামিনীর মায়ের ব্লাডগ্রুপের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল।দীপের শরীর স্বাস্থ্য বরাবরই ভালো। তখনও ভালো ছিল।ছোট থেকে খেলাধুলা করে আর খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক করে তো।ফলে ডাক্তার তার শরীর থেকে যতটা ব্লাড প্রয়োজন সবটুকু নিয়েছিল।কামিনীর মা তারপর বেঁচে গিয়েছিল।সেই থেকে কামিনীর সঙ্গে দীপের সম্পর্ক।তবে সেটা ভালোবাসার সম্পর্ক নয়। উপকারিতার সম্পর্ক।ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সুতরাং দীপের বিশ্বাস যে,কামিনীকে ধরলে পরে সে সেটা জানতে পারে।সৌগত নিশ্চয় কামিনীকে বলবে।না বললেও সৌগতর কাছ থেকে কামিনী জেনে নিয়ে পরে সে সেটা তাকে জানাতে পারবে।

                                চার

      অতএব দীপ কামিনীকে ধরল।তবে সেটা কলেজে নয়।যদিও সে কলেজে ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু দুদিন থেকে কামিনী কলেজ আসছে না।কি যে হয়েছে কলেজ আসছে না।বাধ্য হয়ে দীপ তাকে ফোনে ধরল।তা-ও আবার কয়েকবার চেষ্টার পরে। প্রথমবার রিং করে করে কেটে গেলে দ্বিতীয়বার কল করল।সেবারও রিং করে করে কেটে গেল। তৃতীয় বারও কেটে গেল।অর্থাৎ পরপর তিনবার রিং করে করে কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ বারের বেলায় দীপ কামিনীকে ফোনে পেল।পেয়ে বলল,"কি ব‍্যাপার,ফোন ধরছ না কেন?"
    কামিনী বলল,"তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেছে।"
    "কে?"
    "সৌগত?"
    "কেন নিষেধ করেছে?"
    "তুমি আমাদের ঠকিয়েছ।তাই।"
    "আশ্চর্য!আমি কি করে তোমাদের ঠকালাম?"
    "তুমি হিন্দু নও।অথচ হিন্দু সেজে আমাদের সঙ্গে মিশেছ।এটা কি ঠকানো নয়?তোমার সত্য পরিচয় গোপন না রাখলে কি হতো!আমরা তোমাকে বন্ধু বলে গ্রহণ করতাম না?তোমার সঙ্গে মিশতাম না?নিশ্চয়ই মিশতাম।তাহলে এত পরিচয় লুকানোর দরকার কি ছিল শুনি!"
     "আমার সত্য পরিচয় কোনটা বলছ?"
     "তুমি হিন্দু নও।এটাই তোমার সত্য পরিচয়।"
     "আমি হিন্দু নই তুমি জানো?"
     "তুমি হিন্দু?"
     "তো হিন্দু নই!আমি হিন্দু!আমার বাবা হিন্দু! আমার মা হিন্দু!আমার ঠাকুরদা হিন্দু!আমার পূর্ব পুরুষরা প্রত‍্যেকে হিন্দু!শুধু নামে হিন্দু নয়।সব কিছুতে হিন্দু!আর আমাকে হিন্দু নও বললে আমি মেনে নেবো?কক্ষনো মানবো না।এতে যদি মরতে হয় মরবো!
    "তুমি হিন্দু তো তোমার পুরুষাঙ্গ তাহলে কাটা কেন?"
    "সে কাটা থাকতেই পারে।কত হিন্দুরই পুরুষাঙ্গ কাটা আছে।"
    "তুমি দেখেছ?"
    "না দেখে এমনি বলছি?যদি তুমি দেখতে চাও তোমাকেও দেখাতে পারি।ছোটবেলায় লিঙ্গের নানান সমস্যার কারণে তাদের পুরুষাঙ্গ কাটা পড়ে গেছে।বলো দেখবে কি?"
     "তুমি বেশি করে দেখো গে।আমার দেখার দরকার নেই।"
    "দেখবেনা তো বলছ যে?আচ্ছা,আমার যে পুরুষাঙ্গ কাটা তুমি সেটা জানলে কি করে?তুমি তো মেয়েছেলে।"
     "সৌগত বলেছে।"
     "কি বলেছে?"
     "তোমার পুরুষাঙ্গ কাটা।"
     "সৌগত জানল কি করে?"
     "কেন,তুমি আর সৌগত একদিন একসঙ্গে প্রস্রাব ফিরতে গিয়েছিলে না?সেদিন দেখেছে।"
     "তাই বুঝি!"
     "হ‍্যাঁ।"
     "আর এই জন্যই তোমরা দু-জনে-----"
      "হ‍্যাঁ।"কামিনী সত্যি কথাটা বলল।
      দীপ তখন বলল,"তোমরা দু-জনে এ ব‍্যাপারে আমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা তো করতে পারতে যে,এটা আমার এরকম কেন?জিজ্ঞাসা না করে তোমরা আমার সঙ্গে কি নীচ ব‍্যবহার করলে!"
      কামিনী বলল,"মনে ছিল না।এখন বলো।"
     দীপ তখন বলল যে,আজ থেকে বছর সাতেক আগে তার লিঙ্গের মাথায় একটা ছোট ফুসকুড়ি হয়েছিল।সেই থেকে বড় রকমের ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল।ফলে পেচ্ছাপ করতে গেলে খুব জ্বালা যন্ত্রণা হতো।ওষুধ খেয়ে সেরেছিল না।ডক্টর ঘোষ তখন ওটা ছেটে দেয়।সেই রিপোর্ট তার কাছে এখনও আছে।দেখতে চাইলে সে দেখাতে পারে। 
     কিন্তু কামিনী সেটা বিশ্বাস করল না।সব তার বানানো গল্প বলে দিল।দীপও ছাড়লো না।অনর্গল সে বলতে লাগল,"তোরা বিশ্বাস কর বা না কর আমি হিন্দু।হ‍্যাঁ,আমি হিন্দু।দুর্গা,কালী,লক্ষ্মী,সরস্বতী এরা সবাই আমার আরাধ‍্যা।...আমি হিন্দু!আমি হিন্দু!..এরা সবাই জানে,আমি হিন্দু!আমি হিন্দু!..."




আমার বইপাড়া*


                   ~  সায়ন্তী সামুই



'একলা দিনে একলা আমি,
তোমার সাথ ছিল ভীষন দামি।
আজ তো তুমি অধরা মুঠোফোনে,
বন্দি শুধুই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিফ্রেমে।'

'বই' শব্দটা যতটা না মনকাড়ে তার থেকে বেশি মন কাড়ে নতুন বইয়ের গন্ধ বা গল্পের বই। ছোটোবেলায় গল্পের বই খুব পড়লেও সুপ্ত ভালোবাসা ছিল। কলকাতার বইপাড়ার কথা শুনতাম, শূধু বুঝতাম অনেক বই পাওয়া যায়, মনে মনে ভাবতাম একদিন যাবো বড় হয়ে। মেলায় কেনা বা উপহারে পাওয়া গল্পের বই পড়া অবসরে,এটা নিয়েই কাটল ঘরবন্দি শৈশব। 
উচ্চমাধ্যমিক -এর পর কলেজে যাওয়া,একটু স্বাধীন জীবন, কলকাতার কলেজ স্ট্রিট -এ বইপাড়ার কথা শুনে মনস্থির করলাম যাওয়ার কথা। আমার শ্রদ্ধেয় এক স্যার -এর সংস্পর্শে এসে বই প্রেম আরও বেড়ে গেল, ঠিক করলাম যাবোই ওখানে। পরিস্থিতির কারণে যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। 
দুর্যোগের কারণে বইপাড়ার ক্ষতির কথা শুনে বুকটা ভেঙে গেলো। শৈশবের স্বপ্ন আমার বইপাড়া। পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করে ভেবেছিলাম স্বপ্নের বইপাড়া যাবো। আর হয়তো আমার স্বপ্নের বইপাড়াকে পাবো না। আমার এক বন্ধুর পরামর্শে আজ কিছুকথা আর স্মৃতি নিয়ে আমার স্বপ্নের বইপাড়ার কিছু কথা। অনুতপ্ত মন আজও বলে ―

    ' বইপাড়া' তুমি স্বপ্নে ছিলে,
     স্বপ্নশেষে, স্মৃতিতে রয়ে গেলে।

গুচ্ছ কবিতা

তুমি পুরুষ তুমি নারী 
 
জন্মসুত্রে
 

তোমার পরিচয় তুমি মানুষ
যদিও লিঙ্গসুত্রে

তুমি নারী তুমি পুরুষ
নারী-পুরুষ ঈশ্বরের দৃষ্টিপাতে বিচক্ষণ 
 সমান
মানুষের কাছে লিঙ্গ প্রধান সৃষ্টির ভিন্ন ব্যবধান
   
নারীর শরীরের শালীনে পুরুষের উৎকৃষ্ট অধিবাস
  
নারীর হৃদয় ইরাদা মননে পুরুষ হৃতপিণ্ডের শ্বাস
  
পাতার দুই পৃষ্ঠা
ভালোবাসা নিষ্ঠা
নারীর ঘন সুখ পেতে
 কারণে অকারণে
পুরুষ মরিয়া
 নারীর গহনে উত্থান পতন নারীর দহনে 

 
নারীর শান্ত শরীরে
    পুরুষের আহ্লাদীর দুষ্টু হাত
শীতের মাঝখানে নারীর বুকে পুরুষ কুঁকড়ে রাত  
নারীর গর্ভে জন্ম পুরুষ বিশেষণ
লালন পালনে নারীর ধর্ম জেনে পুরুষ নিশ্চিন্ত নির্বিকার

 
এলোমেলো বিছানা যেমন তেমন রাখা
মানে পুরুষের অভ্যাস

সকালের বিছানা ঘরদোর 
 অগোছালো
মানে নারীর অসভ্যতা

 
মিথ্যে মিশাল
পুরুষ নাকি শুধুই উপার্জন
নারী শরীর চর্চার 
 উদাহরণ  
পুরুষ
 চরিত্রহীন   নারীর কারণ 

নারী চরিত্রহীনা পুরুষের কারণ

শরীরের বাঁকে বাঁকে আনন্দ মাখ স্নান।

 

পুরুষের মন্বন্তরে নারী সুলগ্ন সবুজ প্রান্তর

নারী সময়ের নির্যাতনে পুরুষ বুকে আস্থার

নিঃশ্বাস ।

পুরুষের দুহাত তীক্ষ্ণ অসি নারীর প্রেরণায়

নারী দুর্গা চণ্ডী লক্ষ্মী সরস্বতী মঙ্গল কামনায় 



নারী 

ব্যাবহার করা নষ্ট জিনিষ যত্ন করে তুলে আনে
মায়া যন্ত্রণা ভালোবাসা নিজের সংসারের টানে
। 
পুরুষ

নারীর মূল্যায়ন জানে 

নারীর অধ্যায়ন মানে 

আগলে জীবনের উদ্যানে

নারীর চোখের নীচে লজ্জার ধর্ষণ

 
সার্থক
 জীবনযাপন
নারীর আলিঙ্গন নারীর চুম্বন
পুরুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজন
 । 
দেহের খিদে পেটের খিদে
  
নারী সযত্নে পুরুষের আয়োজন

 
যুগে যুগে ঘুম ভাঙিয়ে   
কেন বলি নারী শুধু ভোগ্য পুরুষ
 নারীর কচি গন্ধ পেলে
পুরুষ আরো বেশি নগ্ন নারীর নগ্নতা গতরে গতর ফেলে
।  
ধ্বংসের ঝলসানি নির্বীজ পাথরে মোমের আলো জ্বেলে ?

 

পুরুষ মুঠোয় ভরে 
নারীর সিঁথিতে সিঁদুর কপালে চন্দনের ফোঁটা
নারীর প্রেমে ভিখারি সাদর নারীর চাদর গোটা 
  
নারী-পুরুষ  সর্বাঙ্গে   সংসারের দালান কোঠা


পৃথিবীর শেষ প্রান্তিক 
 যেখানে পুরুষ দাঁড়িয়ে
স্বর্গের
 আন্তরিক নারী যেখানে দুহাত বাড়িয়ে ।
তুমি পুরুষ ভালো থেকো
 

তুমি  নারী ভালো থেকো 

এক দু'জনের নিস্তারে বিছিয়ে রেখো সংরাগের পরাগ।  

 

নারী পুরষের অবলম্বন
পুরুষ নারীর অবলম্বন
 
ভালোবাসা আঁকড়ে  হৃদয় ভরা যাপন
 । 

পুরুষ   খুলে দেখতে ভালোবাসে  
নারীর সংরক্ষণ
 ।
নারী গর্ভে যত্ন করতে ভালোবাসে
পুরুষ বীর্যক্ষরণ ।
*** 
 

বিকাশ দাস 

কবিতার কচিপাতা ৫

জয় 

কোয়েল 

জয়, 
আমি রাজকুমারী বলছি। 
সেই রাজকুমারী যার রাজত্ব টা বোধহয় তোমার উপর! 
হয়তো সেই রাজত্ব হারাবে, আবার সব ধূলিসাৎ হবে, নতুন রাজত্ব তৈরি হবে। 
তবুও তুমি এত দূরত্ব পার করে এসেছে। 
অদ্ভূত ভাবে এসেছ। 
জানো??
যখন আর আমার কিচ্ছু দেওয়ার মত নেই, 
যখন আমি নিস্তব্ধ, শান্ত, গুমট হয়ে বসে থাকা মেঘের মত শুধু গর্জে উঠছিলাম বারবার, 
তখনই তুমি এসেছ।।
শান্ত বাতাসের মতো কালো অন্ধকার কাটিয়ে নিয়ে গিয়ে আমাকে শান্ত করেছো, 
হাত ধরেছ, সাহস দিয়েছ । 
যদিও সবাই দেয়! 
তবুও তুমি আলাদা।
কারণ তুমি আমাকে চিনে তারপর আমাকে কাছে টানো নি
বরং কাছে টেনে নিয়ে তারপর আমাকে চিনেছিলে।
ধন্যবাদ বন্ধু।



অসুখ।।
সমাজ বসু

মানুষের আজ গাছের কথা মনে পড়ে না,
পাখি কিংবা---
                    নদীর কথাও।
তাই ভুলে যাওয়া সংক্রমণে আক্রান্ত মানুষের ছায়া থেকে
ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে তারা---
আর এভাবেই---
গাছ,পাখি আর নদীর বিরহে জনপদ ভাঙতে ভাঙতে আড়াল করে,
মানুষের সুখ।




বিষাক্ত
কলমে - অন্বেষা মন্ডল

পৃথিবী আজ ধূসর-একরাশ  বিষাক্ত ধোঁয়ায়,
মনুষ্যত্ব বোধ হারিয়ে গেছে,বিবেক বড় অসহায়।
লোভ,হিংসে,মারামারি, দ্বন্দ্ব -
জীবন ভুলেছে সঠিক বাঁচার ছন্দ।
এখন তোমার আমার মাঝে অনিশ্চয়তা জাগে,
একটু খানি ছোঁয়ায় মনে আতঙ্ক লাগে।
আজও অবোধ কুঁড়ি মাতৃগর্ভে শেষ হয়,
রক্ত মাখা মাংসপিন্ড- পৈশাচিক জয়।


পৃথিবী আজ ধূসর -একরাশ কালো ধোঁয়ায়,
মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে,বিবেক বড় অসহায়।
যত্ন করে বাঁচিয়ে যারা রাখে,
সেই জিয়ন কাঠি ডুবছে মরণ পাঁকে।
প্রকৃতিমা ডুকরে কাঁদে, টলেনা তবু শক্ত পাষাণ,
শোনার অনিচ্ছায় অন্ধ চোখ,বন্ধ কান।
শিল্পের মোহিনী জালে জড়িয়ে,
ধ্বংসলীলায় মত্ত, যাচ্ছে সব মাত্রা ছাড়িয়ে।

পৃথিবী আজ ধূসর-একরাশ বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায়,
মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে, বিবেক বড় অসহায়।
ক্ষমতার লোভ - শ্রেষ্টত্বের নেশায় ,
মেতে উঠেছে কুটিল পাশা খেলায়।
এরা অমানুষ - এরা সব পারে,
অন্য প্রাণীদের পায়ের তলায় পিষে মারে।
অট্টহাসির উন্মাদনায়,
সব ভুলে যায়,নিজেদের অস্তিত্ব হারায়।

অপরাধের শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছে,
 বিশ্ব - প্রকৃতি অনেকবার সতর্ক করেছে।
বিন্দু মাত্র ভয় পায়নি,
থামতে এরা সেখেনি।
আরও বিভৎস রূপ দেখিয়েছে,
নির্লজ্জের  মতো পাপের পথে হেঁটেছে।
পৃথিবী আজ ধূসর - একরাশ বিষাক্ত ধোঁয়ায়,
মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে, বিবেক বড় অসহায়।





অগাণিতিক দৃশ্যসমূহ

স্বপঞ্জয় চৌধুরী

 

শূন্যে পেতেছি বোধের জাল

এখানে ধৃত হচ্ছে আলপিন, কালি,

দৈনিক বাজারী ফর্দ

ধৃত হচ্ছে কিছু ফিসফিস শব্দ

অব্যক্ত কানাকানি আর লোমহর্ষক গল্পের খাতা

শূন্যে পেতেছি সংখ্যার যোজন বিয়োজন

পীথাগোরাসের এক ও শূন্যের নীতি

এক হচ্ছে সংখ্যার ঈশ্বর আর শূন্য হচ্ছে দ্বিধাযুক্ত ভ্রষ্টতা

আংগুলে মাখন মেখে পিঁপড়ে ডেকে আনা যায়

পোড়া রুটির ছবি দেখিয়ে আঁকা যায় মানবিক কঙ্কাল।

অন্ধ পথ চলে পা গুনে গুনে সেও টের পায় জালনোট

আর সমুখে গর্তের সন্ধান।

সূর্যের আলো দেখে যে পথিক চোখে দেয় হাত

এ পথ তার জন্য নয় সে বরং গর্তের শীতল ঘোরে

ঘুমিয়ে থাকুক অনাদিকাল।




পথ
--চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

খাতাগুলো ছিঁড়লেও
অগোচরে থেকে যাবে একশোভাগ হিসেব

তোমার থেকেই অন্যতুমি
মনে রেখো
সুন্দর সকালের উল্টোপিঠে দুঃখ-রাত

তর্জনী যতো উঠবে
বৃদ্ধাঙ্গুলি তত কাছে

ব্যক্তি এক। পথ অগাধ
বেছে নেওয়া তোমার কর্তব্য ।



দেশটার কি হবে?
          - শুভব্রত সরকার

সরকার যন্ত্র,দেয় 
ধর্ষণ এর মন্ত্র,
ধর্ষিত হয়ে রাষ্ট্র ন্যায় চায় ফুটপাতে।
চলে গোলাগুলি,দিয়ে
ধর্মের বুলি,
মৃতদের মাংস খাবে ধর্ম নুন ঢেলে জল ভাতে।
চাই ওদের নতুন নীতি,
চুলোয় যাক সম্প্রীতি,
মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে রাজা হয় এক রাতে।
সেই ছেলে গুলি,
আওরাতো বিপ্লবের বুলি,
দেশদ্রোহী আক্ষা পেয়ে মরলো তো অপঘাতে।
চুপ থাকাই শ্রেয়,কারণ ওরা
 "শক্তিশালী অপরাজেয়"
পরিবর্তন চাইলে তোমার দেহ খাবে শেয়ালতে।
জনগণ খুবই ক্লান্ত,
তবু তারা আজ শান্ত,
ফেসবুকে হ্যাজট্যাগে বলে "দেশটার কি হবে!"



অন্তরালে

        বিধানচন্দ্র রায়

হাভাতে শ্রমিকের খাতায় যতটা
                         উজ্জ্বল হয়ে উঠছি
কবিতা -- ততটাই হয়ে উঠছে
      তেতো, বিষাক্ত, ছেলেমানুষি ...

সমস্ত কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি
শ্রমিক ভাই-বোনের ঘাম,
                                চাবুকের দাগ।

চায়ের পেয়ালাতেও স্পষ্ট হচ্ছে
পাহাড়ি মেয়েটার কালশিটে তনু

দেখতে পাচ্ছি
কয়েকটা লোক ছাড়া
সবাই শ্রমিক, স্বপ্ন খোয়ানো
মৃত লাশের জীবিত রূপ --- মরণের
প্রত্যাশায় হার মানে না কেউ ...
আর ---
অন্তরালে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সুভাষ বসু
             আবার আসবে;
             ফুল ফুটবে মানুষের জন্য।




ঘুমিয়ে আছে গল্প কত...( গদ্য )
 পল্লবী মালো

আমার অনেক গল্প আছে। তাদের একটাও আমার নিজের নয়, নিজের লেখাও নয়। যাদের গল্প তারাই লিখেছে। আজ অব্ধি পাবলিশও হয়নি কোথাও। অপ্রকাশিত সেসব গল্প আমি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি বুকের মধ্যে। আজ বলব এক এক করে। 
অবিনাশ যে মাধবীকে ভালবেসেছিল, মাধবীর আগেই জানতে পেরেছিলাম আমি। পড়ন্ত বিকেলের প্রথম আলো ওর মুখের উপর পড়লে বেশ মায়াময় লাগে। মাধবীকে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি, সবটাই কিন্তু অবিনাশের মুখে। গল্প শুনেই তারে অল্প অল্প... থাক্‌ না হয় সেসব কথা। 
তমালের তখন বয়স কত? বড়জোর ওই সতেরো-আঠারো হবে। বাবার পকেট থেকে চুরি করে ও একটা সিগারেট টেনেছিল প্রথমবার, তাও আবার দেবেনবাবুর টিউশানির ফাঁকে। তুলসি পাতা চিবিয়ে ঘরে ফিরে তমাল সেদিন আমাকেই প্রথম বলেছিল, “জীবনে প্রথমবার সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লাম”। আমিও মনে মনে হেসেছিলাম ওর উত্তেজনা দেখে। 
তানিয়া বলেছিল, স্কুলের প্রেয়ার লাইনে, ক্লাসের ফাঁকে অয়ন নাকি আড়চোখে দেখে ওকে। চোখের পলক না ফেলে লুকিয়ে লুকিয়ে... আর হঠাৎ তানিয়া দেখে ফেললেই ধরা পড়ে যায়, ভান করে ব্যস্ততার। অয়নের ওই মিছে ব্যস্ততা দেখেই মজা পায় তানিয়া। অয়নের চোখ দিয়েই নিজেকে সুন্দরী ভাবতে ভালোলাগে তানিয়ার। এ এক অদ্ভুত ভালোলাগা। যেন পুরো পৃথিবীটাই শান্ত, তাপমান স্বাভাবিক। শুধু তানিয়ার বুকের উষ্ণতাটাই বেশি, ওর হৃৎপিণ্ডেই ভুমিকম্প। লাখো-লাখো মানুষের এই  পৃথিবীতে সেই কম্পনের সাক্ষী শুধু দুজন…তানিয়া আর আমি। 
শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায়, খোয়াইয়ের পথে সৌমিত্র যখন রত্নার হাত ধরে বলেছিল, “আমার জানিস খুব ইচ্ছে, এই রবিঠাকুরের দেশে একটা ভালোবাসার সংসার গড়ার... আমার সঙ্গে পালিয়ে আসবি? শহুরে ঝঞ্ঝাট বড্ড একঘেয়ে রে”। আমি জানি ঠিক তখনই রত্নার বুকের খাঁচা থেকে ডানা মেলে উড়ে গিয়েছিল একশোখানা রঙিন পাখি। রত্নার পাও কি আর মাটিতে ছিল? দুটো পাখা নিজের শরীরেও জুড়ে দিয়েছিল ও। পথভোলা বাউলের একতারায় তখন, “আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে?” মনে আছে, সব স্পষ্ট মনে আছে আমার।
পুকুরধারের সূর্যডোবা দেখতে দেখতে রুপমের ঠোঁট ডুবেছিল পিয়ালির ঠোঁটে, পিয়ালির হৃদস্পন্দন এক লহমায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছিল। বাড়ি এসেও কমেনি সেই ধুকপুকানি। রুপমের প্রতিটা স্পর্শও পিয়ালি লিখে রেখে গেছে…শুধু আমিই জানি সেটা। ওদের প্রেম পরিণতি পায়নি শেষমেশ…কিন্তু পিয়ালির সেই গোপন ভালোলাগাটা আমার মধ্যে রেখে দিয়েছি সযত্নে।    
দশবছর আগের ফেলে আসা প্রেমকে সেদিন কলেজস্ট্রীটের রাস্তায় অচেনা ভিড়ে দেখতে পেয়েও চিনতে পারল সৌম্য। সময় ফিরতে চাইল কলেজ ক্যাম্পাসে। কিন্তু রুমার সিঁথির সিঁদুরে এসে থমকে গেল হতভাগ্য সেই সময়ও। সৌম্যর বুকের কষ্টটা দেবযানীকে বলা যায়না। প্রাক্তনের খবর জানানো যায়না বর্তমানকে। কিন্তু আমাকে তো বলাই যায়। আমার সামনে খোঁড়াই যায় ইতিহাসের কবর। 
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে লড়তে কাকলি হাঁপিয়ে যাচ্ছে আজকাল। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়ে বারবার অতীতটাকে ফিরে দেখতে চায় ও। পাতা উল্টিয়ে দেখে কফি হাউস, রবীন্দ্রসরোবর, নন্দন আর গঙ্গার ধার... উফ্‌, কাশ্মীরের স্বর্গটা ছোঁয়া হলনা। শেষ কেমোটা নেওয়ার আগে আমার কানে কানে এসে কাকলি বলেছিল, “মরিতে চাহিনা আমি...!” বাকিটা আমি আর শুনতে পাইনি, হয়ত শুনেছে স্বর্গ...সেই স্বর্গও কি কাশ্মীরেই?
মৈনাক চলে যাওয়ার পরে, ডিপ্রেশানের একলা অন্ধকারগুলো আমার সঙ্গে কথা বলে কাটাত পর্না। চোখের জলে ভিজে যেত পৃষ্ঠা। 
অঙ্কিতা একসময় আমাকে শুনিয়েছে চাঁদের পাহাড়ের গল্প, পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়া রাজকুমারের গল্প...ওর হাতের কবিতাগুলোও লুকিয়ে রেখেছি আমি। অঙ্ক-বিজ্ঞান-এন্ট্রান্সের চাপে আজকাল শুধু ওর কলম থেকে নাভিশ্বাসই বেরোয়। কথাও হয়না আমাদের খুব একটা।  
ধর্ষণের পর গোটা মহল্লাই বাঁকা চোখেই তাকায় বৃষ্টির দিকে। ওর শরীরের মানচিত্রটাও একটু বদলেছে। মনটা বদলেছে কি? সেই মনের হদিশ পায়না কেউ... আমি ছাড়া কেই বা বোঝে ওকে? বুঝতে চায়ও বা কি কেউ? 
সৃজার জীবনে অনেক দুঃখ। কর্পোরেট অফিসের চাকুরে বাবার অহং আর সীমাহীন ঔধত্য, মায়ের বঞ্চনা আর চোখের জল... বাবা-মায়ের দাম্পত্য অশান্তিতে সৃজার জীবন থেকে হারিয়েছে সব রঙ। সৃজার ওই সাদাকালো শৈশবে মিশে থাকা যন্ত্রণাগুলো ভাষা পায় আমার কাছে এসে। মুক্তির স্বপ্ন বোনে। 
জয়ের গলায় দড়ি দেওয়ার পরে ওর সুসাইড নোট নিয়ে কাটাছেঁড়া হল কত। ওই একটুকরো কাগজে কতটুকুই বা লেখা ছিল? “ আমি আর পারলামনা...শেষ অব্ধি”। ব্যাস, অতটাই। শেষের শুরুটা জানতে হলে দেখা করতে হত আমার সঙ্গে। টেবিলের এক কোণে পড়েছিলাম আমি... সবটা জানতাম,, কিন্তু বাঁচাতে পারলামনা। ওর দেহটা যখন চিতার উত্তপ্ত কাঠে জ্বলে-পুড়ে ধোঁয়া হয়ে মিশে যাচ্ছিল বাতাসে...ওর না বলা কথাগুলো আমার বুকের ভেতর থেকেও দীর্ঘশ্বাস হয়ে উড়ে যেতে চাইছিল ওর সঙ্গে। জয় চলে গেল। ফেলে রেখে গেল অনেক না বলা কথা।  
কত কথাই তো বলা হয়না, হয়ত বলা যায়ওনা। কিন্তু লেখা হয়। আমাদের বুকের মধ্যে লেখা হয়, লেখাগুলোই থেকে যায় । লাল-নীল-হলুদ মলাটের একেকটা ডাইরির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে একেকটা ইতিহাস, গুচ্ছ গুচ্ছ ফ্যান্টাসি, স্বপ্ন, হতাশা, উল্লাস, যন্ত্রণা, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি। আমাদের বুকের মাঝেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে সভ্যতা। তুমি পাতা উল্টে দেখবে না???  
তোমরা তো কথা বলেছ, কত গোপন, কত আপন সেসব কথা। 
আজ নিষ্প্রাণ অক্ষরেরাও জাগছে। আমরা ডাইরিরা এবার সব জমে থাকা গল্পগুলো বলব। 
বন্ধু, তুমি কি শুনছো? শুনতে পাচ্ছ? 




অব্যক্ত কথা
🔸কবি-নীল আকাশ

সব অভ্যাসই একদিন অভ্যাস হয়ে ওঠে
শূন্যতা চাপা পড়ে কবরে;
দুটো মেঘ যদি আজ, অভিমানে চোট খায়
বৃষ্টি তো নামবেই সাগরে।

জমেছে পথের বালি,একরাশ বাঁধা পেয়ে
শরশয্যায়  আমি দাঁড়িয়ে,
ঝিনুক কে বলে দেখো, এতটা নিরব কেন-
মুক্ত কে দিয়েছে সে হারিয়ে।

তোমার তো মনে হবে, একলা চলতে হবে,
পুরানো সব মায়া পিছু ফেলে
কাব্য কী করে লিখি, একবার ভেবে বলো
কলমের কালি ঐ দূরে ঠেলে।

আমার ছোট্ট মনে, আলপনা আঁকা ছিল
আঁধারে হয়ত বোঝা যায়নি
শুকিয়ে গেছে ফুল,সাজিতে পড়ে থেকে;
দেবতার চরণ তা পায় নি। 




তুমি মৃত্যুর মতো রাজকীয় হয়ে এসো ( গদ্য )

দেবযানী ভট্টাচার্য
##########################
প্রতিনিয়ত হেঁটে যাই বেদনার দিকে,
সুখের প্রতিভূ হয়ে প্রচ্ছন্ন রাখি প্রগাঢ় দুঃখ গুলোকে, মুঠো খুলে বসে ছিলাম, কখন নিশ্চুপ গলে পড়ে গ্যাছে টের পাই নি।
একটা ফাঁকা প্লাটফর্মে বসে থাকি নিরালম্ব ,নিরাভরণ হয়ে।

শূন্য এক বলয়ের কেন্দ্রে নকল পূর্ণতায় ভরে উঠি। বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়। বুদ্বুদ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায় নিযুত দুঃখ গুলো,  নদীর ধারে ওদের  কান্না গুলোকে নিয়ে  কে যেন কুৎসা রটায়। নিয়ন্ত্রিত রাখি বিলাপ,অনুভূতিতে জেগে থাকে বিলাপের মতো তোমার মুখ,আমি বেদনায় হৃদয় রাখি।তুমি মৃত্যুর মতো রাজকীয় হয়ে এসো প্রিয়।



কবি বিরহ
কলমে: নীলাঞ্জন চক্রবর্তী

মোর শব্দহারা দোর, ভোগে প্রেমরোগ।
অগুনতি তারা সব ভিড় করে চোখে।
তোমার বিয়োগে দিন হল কত যোগ।
শেষ রাতে ফিরি বাড়ি যাযাবরী শোকে!

দ্বিতলে পড়ার ঘর, নেই তাতে আলো।
কলমে ফুরায় কালি আঁখি তেজী লাল।
খাতাতে কাগজ সাদা শব্দ মাখে কালো।
এঁটো পাতে চাটি ভাত, রেশনের ডাল!

লেখনীয় সংসারে যে পরকীয় লোক।
বিরহ পাহাড় শ্বাসে শীতলতা বাড়ে।
দেরাজ উপচে পড়ে, পাণ্ডুলিপি শোক।
শব্দেরই শবদেহ পচে হিমঘরে!

যে ব্যর্থ কবির সুখ শনি করে গ্রাস।
সে সঙ্গিনী অভিধান খোঁজে বারোমাস!



সৃষ্টির ছাপ
          সত্যব্রত ধর

বেকারত্বের রোদ মাথার উপর পড়তেই...
চশমার চোখ থেকে ঝুলে পরে,
কষ্টের ঘাম...!
দু-আনার ব্যস্ততার খেসারতে,
বন্ধুদের আড্ডাগুলো...
খবরহীন পোড়া ছাই হয়ে উড়ে গেছে!
ফাঁকা পকেট নেড়ে উদাস দৃষ্টি...
রঙিন স্বপ্ন ভুলে,
ছাপোষা সাদা-কালো বর্তমানই জিন্দাবাদ...!
গান রচনার পঙক্তিতে সুর দেওয়ার আগেই,
পুরোনো গীটারের সঞ্চয় ছিঁড়ে...
ক্যারিয়ার গুঁড়িয়ে যায়!
রুলটানা টাইমলাইনে...
স্যাক্রিফাইজের অজানা পথে,
সোশ্যাল ডিসটেন্সের কাঠগড়ায়...
ভ্যাবাচ্যাকা সময় বেআব্রু!
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া...
ক্ষণিকের জনশূন্য জীবনে,
বেলাশেষে সৃষ্টির ছাপ ফেলাই...
যেনো তৃপ্তির ঢেকুর।



মনোজ

    সোমা ধর ঘোষ 

আমার ডান হাত লিখছে 
দৈনন্দিন...
জীবনের পাতায় পড়ছে দিনযানের
সোহাগী চুম্বন 

বাঁ হাতে ছুঁয়েছি তোমার মধুবন...
নীরবতার ব্যাপ্তি 
দুই কায়ার মাঝে 
হৃদয়তন্ত্রীতে বেহাগ বাজে...

বাঁ হাত তুলে নেয় তোমার মধুবনের 
একগুচ্ছ ল্যাভেন্ডার...
তুমি তখন শিহরণে---গুঞ্জরনে 

হারিয়েছে তোমার আলয়?
হে সহজিয়ার পথিক, 
আমার আলয় তোমার হোক...
রেখেছি ল্যাভেন্ডার থোক 

....আমার বাঁ হাত ডান হাতকে ধরে 
ফেলে...
চুপি চুপি বলে মন 
সকল মনোজ গোপনীয়তার
আজ করব উদযাপন...



কবিতা১

           এখন যেভাবে সাজে                      
ঋভু চট্টোপাধ্যায়

 

লোকে বললেই শূন্যতা দাঁড়কাক সাজে

দাঁড়িয়ে যায় মেঘ কুমারি রাত।

অসংখ্য তারাদের সাথে হাতে হাত ধরে

খেলতে থাকা লুডো বা দাবা তাদের

সব গুটি নিঃসরণর লাল তরঙ্গ ছুঁয়ে

ঘরে ফেরে ভুল ঠিকানার নৌকা।

এভাবে বললেও সব স্মৃতি মাখামাখি

আজন্ম রোদ্দুর ভুলে যেভাবে নামতে থাকে

একের পর এক গোটা দিন, ভাঙা দুপুর

অথবা আধ ছোঁয়া সন্ধ্যার শুরু,

চায়ের সাথে জন্ম নেয় ক্ষোভ এবং ভালোবাসা

তারপর মাটির সাথে মিশে যায় ভাঁড় ও শেষের তলানি,

জানা নেই তার কোন জীবন বীমা ছিল কিনা,

জানা নেই কোন আন্দোলনের আগে দমনের কৌশল

কে ঠিক করে, কে বলে এই বার দিন হলেই

দ্বীপান্তরে রথ যাবে, এই বার সন্ধে হলেই ঘরে ঘরে বজ্রপাত,

এই বার রাত হলেই ভুল ঘুমে জ্বলে উঠবে চোখ,

সমস্ত গ্রাফ এক্স আর ওয়াইএর মাঝে খুঁজবে ছেদ বিন্দু

অথচ কেউ কথা বলবে না, শব্দ না, এক হবে ছায়াদের অমৃত যোগ।



কবিতা২

জং ধরা সেমিকোলন              
ঋভু চট্টোপাধ্যায়

 

সেখানেই একটা পুরানো সেমিকোলনে লাগানো

রয়েছে কিশোরী বিকাল, স্মৃতি কথা মানে

শুধুই জংধরা একটা মাত্র অশান্ত উপস্থিতি

পাশে সেই বয়ে যাওয়া ছোট্ট খাল সেই চুপচাপ

বিকালের ছাপ, ফেরার সময় হাল্কা বাজার,

এখনও সেই দেরি, সেই মুখ কালো মেঘের ভার,

সেই লুকিয়ে রাখা ক্লাবের এক কোণে দাঁড়ানো

দুটো পা দরজায় লালা লেগে, সেই এক চকলেট সুখ।




Friday 3 July 2020

রেল কলোনির আড্ডা ( পর্ব ৪ )

চিত্তরঞ্জনের ইতিহাস বলতে গেলে রেল কারখানা শুধু নয় ; আরও অনেক ইতিহাস মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই শহরের অলিতে গলিতে । এই যেমন ধরুন হলো ব্রিক্সের আবিষ্কার ; সেও তো এই চিত্তরঞ্জনেই । 


1950 সালের পয়লা নভেম্বর ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম ইঞ্জিনটি স্বর্গীয় দেশপ্রেমিক চিত্তরঞ্জন দাশের নামে উৎসর্গ করেন, এবং তাঁর নামানুসারে এই নতুন তৈরি প্রজেক্ট এর নাম রাখেন চিত্তরঞ্জন লোকমোটিভ ওয়ার্কস বা CLW.এবং সাথে সাথে মিহিজাম স্টেশন এর নাম বদলে রাখা হলো চিত্তরঞ্জন।


চিত্তরঞ্জন শহরটি জখন গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল তখন এরিয়ার মোট ক্ষেত্রফল ছিল মাত্র ১৮.৩৪ স্কোয়ার কিলোমিটার ও মোট বাজেট ছিল মাত্র ১৪ কোটি টাকা । 


তখন এম গণপতি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ। ডিভি বয়েজ স্কুলের পাশে প্রথম এডমিনিষ্ট্রেটিটিভ অফিস গণপতি হাট তাঁর নামেই তৈরি এবং তাকে সম্মান জানবার জন্য প্রথম রাস্তার নাম রাখা হলো গণপতি এভিনিউ। ধীরে ধীরে রাস্তা শহরের দিকে এগোতে শুরু করলো। ভিআইপিদের যাতায়াতের জন্য তৈরি হল ৬ নম্বর রাস্তা যেখান দিয়ে তারা সোজা কারখানা পরিদর্শনে যেতেন। ধীরে ধীরে কোয়ার্টার বানানোর কাজ আমালাদহির দিকে এগোতে লাগলো। সলিড ইঁটের তৈরি দিয়েই কোয়ার্টার বানাবার কাজ চলছিল। কিন্তু বাজেট ফিক্সড আর কর্মীর সংখ্যা অনেক। এই টাকায় কি অত সংখ্যক কর্মিকে কোয়ার্টার দেওয়া যাবে ? 


এই সময় মিস্টার থাডানি বলে এক সিভিল কন্ট্রাক্টর এগিয়ে এলেন। তিনি তাঁর নকশায় হলোব্রিক্স এর পরিকল্পনার কথা জানালেন। গণপতি সাহেবের সেটা পছন্দ হলো। অর্ডার দিলেন হলো ব্রিকস তৈরির। কিন্তু বানাবেন কোথায় ? এখন যেটা এরিয়া সিক্স বলে পরিচিত সেই ফাঁকা মাঠের মাঝখানে থাডানি সাহেব বানিয়ে ফেললেন হলো ব্রিক্স এর কারখানা। শুরু হলো সিমেন্ট বালির মিশ্রনে নতুন ধরনের ছাঁচে ফেলা হলো ব্রিকস। ইঁটের মাঝখানে ফাঁপা। ভাবা হয়েছিল  ইঁটের ভেতরে বালি ভরা হবে। তাহলে গরমে দিনের বেলায় ঠান্ডা থাকবে ঘর। কিন্তু হয় নতুন করে খরচের ভয়ে সেটা আর করা হয়নি। ভালোই সাড়া পাওয়া গেল। সেই ইঁটে কোয়ার্টার বানাতে কোনো অসুবিধে হলো না। ব্যাস জোর কদমে তৈরি হতে লাগলো হলো ব্রিকস। ইঁট বাইরে থেকে এনে যা খরচা তার অনেক কমে এই ইঁট এখানেই তৈরি হতে লাগলো। ধীরে ধীরে লোকের মুখে ওই শেডের নাম হয়ে গেল থাডানী শেড। ১৯৫০ সালে এই শেডের ওপর মাইক লাগিয়ে বাজানো হয় মহালয়া । 


কি অদ্ভুত না ! হলো ব্রিকস এর মত এক নতুন ধারণা এই চিত্তরঞ্জনেই শুরু হয় , যার ফলে এই শহর সস্তায় বাড়ি বানানোর এক অভিনব পন্থা গড়ে নজির করে তোলে । এমন ইতিহাস আরো আছে , আসলে চিত্তরঞ্জনের পাতায় পাতায় ইতিহাস । কিন্তু তবু এই শহর দাবি করতে শেখায় নি কোনদিন । বরং চিরটাকাল দিয়ে গেছে অনেক অনেক বাকিদের ।
এ শহরের জীবনযাত্রার ছোঁয়ায় তাই অজয় নদের ভূমিকা বিশাল । এ নদকে বাদ দিয়ে চিত্তরঞ্জনকে কল্পনাও করা যায় না । সুখ দুখের সঙ্গি হয়ে অজয় বয়ে চলেছে এ শহরের হৃদয় ছুয়ে । অজয় নদের ধারে গড়ে উঠেছে হনুমান মন্দিরের মত বনভোজন স্থল । প্রতি বছর শীতের কুয়াসা বুকে জড়িয়ে কতো মানুষ ভিড় করে একটু আনন্দে মেতে উঠতে । আবার ছট পুজোর আনন্দ অথবা মহালয়ার ভোরে ভিড় করা মানুষদের তর্পনের একমাত্র স্থল হয়ে উঠেছে এই অজয় । তবে একটা দিক দেখলেই চলবে না । প্রতি বছর অজয় নিজের সাথে ডেকে আনে ভয়াবহ বন্যা । গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিজের গভিরে । 


আসলে চিত্তরঞ্জন নিয়ে স্মৃতিমন্থনের অভাব নেই । এখানে পুরুষের পর পুরুষ এসেছে , থেকেছে আবার চলেও গেছে । কতো স্মৃতি আজ এর পাতায় পাতায় । তেমনই একটা স্মৃতিমোহ অধ্যায় হল টেকনিক্যাল স্কুল ; রেল যাত্রা ও আরও অনেক কিছু । একে একে সবই জানাবো । 


তবু চিত্তরঞ্জন কোনোদিন কাউকে আঁকড়ে রাখে নি নিজের মধ্যে , চিরকাল ঠেলে দিয়েছে দূরে ; প্রতিষ্ঠিত হতে  , নিজের পায়ে দাঁড়াতে । রেল ইঞ্জিনের রেল সুবিধা দিয়ে গেছে আমাদের বারবার যাতে যাতায়াতের সমস্যা না হয় । সেই রেল ইতিহাস নিয়েই আমার আজকের পর্ব । 


চিত্তরঞ্জনে রেল ইঞ্জিন তৈরির ইতিহাস অনেক পুরোনো । এই লেখার প্রথম দিকেই বলেছিলাম চিত্তরঞ্জন কে কেন বেছে নেওয়া হলো এই কারখানা তৈরির জন্য তা পরে বলবো । আজ সেদিক নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক । চিত্তরঞ্জন বিখ্যাত হওয়ার ইতিহাস বলতে গেলে চলে আসে সেই রেল ইঞ্জিন তৈরির  ইতিহাস।এই ইতিহাসে  যেমন গর্ব বোধ হয়, ঠিক তেমনি লুকিয়ে আছে বহু বিষাদ বেদনা ভরা কাহিনী । চলুন তাহলে এই প্রাণের তৈরির শহরের সেই দিনগুলো থেকে ঘুরে আসি একবার ।


  চিত্তরঞ্জন সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল রেলওয়ে ইঞ্জিন-কারখানা তৈরি করে বিদেশ থেকে ইন্ঞ্জিন আমদানী বন্ধ করা । ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি এ বিষয়ে বেশ ওয়াকিবহল ছিল যে ভারতে নতুন কারখানা নির্মাণে যথেষ্ট ঝুঁকি আছে ; তবে বিদেশ থেকে ইঞ্জিন পরিবহন করতে খরচও বাড়ছিল । তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তারা কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করেন ।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাম্পারিশ এন্ড কোম্পানিকে রেল ইঞ্জিন তৈরির জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করার দায়িত্ব দিলে, এরা ভারতের চারটি জায়গা পছন্দ করেছিলো । তার মধ্যে একটি মহারাষ্ট্রের পুনেতে কাছে ঘোড়পারে, দ্বিতীয়টি মধ্য প্রদেশের ছিন্দোয়ারা জেলার জুন্নারদেও, তৃতীয়টি হরিদ্বারের কাছে  ( বর্তমানে ভেল ওযার্কসসপ) এবং চতুর্থটি বঙ্গের কাঁচরাপাড়া । চাঁদমারির নামও অবশ্য বিবেচনায় ছিল কিন্তু দেশ ভাগের ফলে এই নামটিও বাতিল করা হয় । বর্গী জলদস্যুর কথা চিন্তা করে মহারাষ্ট্রের নাম বাদ দেওয়া হয় । কয়লা খাদান পূর্ণ এলাকার জন্য বাদ পরে মধ্য প্রদেশের  নাম,  চীন সীমান্ত নিকটবর্তী হওয়ার জন্য বাতিল হয় হরিদ্বারের নাম  এবং অবশেষে কাঁচরাপাড়ার নাম,  নির্বাচনে সর্বসন্মতিক্রমে গৃহীত হয় ।


সারা ভারত জুড়ে তখন, স্বাধীনতা আন্দোলনে যুব সম্প্রদায়ের উন্মাদনা , তার ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি , তাইতো, কিছু কালের জন্য তারা ইন্ঞ্জিন কারখানা তৈরির পরিকল্পনা স্থগিত রাখলো । অবশেষে,  উপস্থিত হলো ১৯৪৭ সালের ১৫-ই আগস্ট । স্বাধীন হল ভারতবর্ষ । রেল ইঞ্জিন কারখানা তৈরীর পরিকল্পনা, বাস্তবায়িত হল না ইংরেজদের দ্বারা । স্বাধীনতা উত্তর সময়ে এই পরিকল্পনা স্থানান্তরিত হলো বিহার বাঙলা মধ্যবর্তী গ্রাম চিত্তরঞ্জনে । জনমন দুঃখ খুশির জোয়ারে ভেসে উঠলো নতুন এই প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে । তবে শহর গঠনের কাজটা খুব সহজ ছিল না । নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠলো ইতিহাস । চলুন আজ সেই ইতিহাসের পাতায় ঘুরে আসা যাক । 


সালটা ১৯৪৮ । স্বাধীন ভারতবর্ষে চিত্তরঞ্জনে রেল ইঞ্জিন কারখানা স্থানান্তরিত তো হলো , কিন্তু এখানে কারখানা তৈরি করতে গেলে যে জমি লাগবে তার অধিকাংশটাই সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চল । তাদের সাথে কথা না বলে কোন জমিই অধিগ্রহণ করা যাবে না । রেল কর্তৃপক্ষ সেই মত কাজ শুরু করে দিলো 

বর্তমান চিত্তরঞ্জনের সাথে , তৎকালীন চিত্তরঞ্জনের একটি তুলনামূলক আলোচনা করলে ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার হবে । বুঝতে পারবেন চিত্তরঞ্জন গঠনের আগে রেল কর্তৃপক্ষকে কোথা কোথা থেকে কি কি ঝামেলা পোয়াতে হয়েছিল , যার আলোচনা আজও একটা জলজ্যান্ত ইতিহাস হয়ে চিত্তরঞ্জনে রয়ে গেছে ।


তৎকালীন সময়ে অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম ছিল সিমজুরী, ফতেহপুর, কুশবেদিযা, ডাঙ্গাল ও আমলাডিহি । তার মধ্যে কুশবেদিযা, ডাঙ্গাল গ্রাম দুটি অজয় নদের ওপারে বিহার অন্তর্ভুক্ত ছিল । সিমজুরী , ফতেহপুর ও আমলাদিহি ছাড়া  বর্ধমান জেলার গৌরান্ডির দাসকিযারী, পান্ডবেশ্বর এই সব এলাকায় ও  ছিল সাঁওতালদের ঘনবসতি । দামোদর নদের উভযপারে বারাবনি, সালানপুর, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর, ফরিদপুর, কাঙসা, ইলামবাজার, তারাপীঠ ছিল একসময়ে সাঁওতাল আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। এগুলি ধিরে ধিরে অধিকৃত হতে থাকে নগরায়নের জন্য । 


১৯৪৮ সালে চিত্তরঞ্জনের নকশা প্রস্তুত ও জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হয়  । ঠিক করা হয় গ্রামগুলি অধিগ্রহণ করে রেল কারখানা নির্মিত হবে । প্রায় সকলেই সেই ডাকে সাড়া দিলেও সিমজুরী ও ফতেহপুর গ্রাম দুটি রাজি হয় নি । ওই দুটি গ্রাম ছিল সাঁওতাল অধ্যুষিত । সাঁওতালদের সাথে বহু আলোচনা করা হয় রেলের তরফে কিন্তু তারা এসব শুনতে মোটেও রাজি ছিল না । জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে রেলের সাথে সাঁওতালদের এক অসম সংগ্রাম আরম্ভ হতে থাকে । 


রেল কর্তৃপক্ষ তবু লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে এগিয়ে যেতে চায়নি । নানা রকম প্রলোভন দেখানো হয় যাতে এই জমি সাঁওতালরা দিয়ে দেয় , কিন্তু তারা গোঁ ধরে বসে ছিল । ফলে কোন আলোর দিশা রেল দেখছিল না । যুদ্ধই মনে হচ্ছিল একমাত্র পথ । সেই পথ রক্তাক্ত , সেই পথ অসহনীয় ; তবু সেই পথই রেল কোম্পানির কাছে শেষ পথ । অতঃপর নোটিস গেলো সরকারের জমি খালি করার । সাওতাল গ্রামবাসীদের কাছে এ এক অন্ধকার দিনের সূত্রপাত ছিল । তবু তারা দমিয়ে যায় নি । অবলা সাঁওতাল ও আদিবাসীদের রক্তে ভেসে উঠলো চতুর্দিক । অবশেষে এক সমঝোতার মধ্যে দিয়ে দমিয়ে দেওয়া হলো তাদের । জয়ী হলো চিত্তরঞ্জন নির্মাণের স্বপ্ন । 


কিছু মানুষ একটি চাকরি, পাঁচশো টাকা ও একটি সাইকেলের লোভের জালে পা বাড়ালেও , কিছুজন তখনও শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিল । চিঠি পাঠানো হলে রেলমন্ত্রক তাদের আবেদন খারিজ করে দেয় । ধামনবেরিযা, আছড়া, আমঝোরিযা, জিমারী, দেন্দুযা, বাথানবাড়ি, হালদা, সামডি, পিথাকিযারি, বৃন্দাবনী , খাঁড়িমতি, রাঙাশলা, নোযাদিপ, ভাগা, আমুই, শিউলিবাড়ি, দনদহা, ধানগুরি প্রভৃতি গ্রামের মোড়লদের পরামর্শে অবশেষে সাঁওতালরা নিজেদের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো । সরকারের প্রতিনিধিদের হাতে শেষ সম্বলটুকু,  জমির দলিল, হাতে তুলে দিলে নগদ এক কুড়ি টাকা  ও ব্যাঙ্কের বই দিয়ে দেওয়া হয় , যাতে লেখা ছিল প্রাপ্য টাকার অঙ্ক।   চাকুরীর জন্য ডাকা হয় কয়েকদিনের মধ্যেই আর তখনই দেওয়া হয় প্রত্যেককে এক একটি সাইকেল । 


মাত্র 14 কোটি টাকা নিয়ে চিত্তরঞ্জনের 18.34 স্কোয়ার কিলোমিটার শহর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কারখানার ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ চিত্তরঞ্জনেই হতো আর বাকি লোহার স্ট্রাকচার ইত্যাদি আসতো বার্নপুর এবং জামশেদপুর থেকে। তখন এম গণপতি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ। ডিভি বয়েজ স্কুলের পাশে প্রথম এডমিনিষ্ট্রেটিটিভ অফিস গণপতি হাট তাঁর নামেই তৈরি হয় । চিত্তরঞ্জন গড়ার কাজ ১৯৪৮ সাল থেকে জোর কদমে শুরু হয় এবং ২ বছরের মধ্যে এর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়ে যায় ।


1950 সালের পয়লা নভেম্বর ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম ইঞ্জিনটি স্বর্গীয় দেশপ্রেমিক চিত্তরঞ্জন দাশের নামে উৎসর্গ করেন, এবং তাঁর নামানুসারে এই নতুন তৈরি প্রজেক্ট এর নাম রাখেন চিত্তরঞ্জন লোকমোটিভ ওয়ার্কস বা CLW.এবং সাথে সাথে মিহিজাম স্টেশন এর নাম বদলে রাখা হলো চিত্তরঞ্জন। 


এই হলো একটি ইতিহাসের সূচনা , যার আদ্যপ্রান্ত সংগ্রাম আর ইতিহাসে মোড়া । চিত্তরঞ্জনের গঠনের সময় থেকেই নির্মল শহর গঠনের দিকে জোর দেওয়া হয় । রাস্তার দুপাশে মাথা তুলে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা কোয়ার্টার এক অন্য পৃথিবী সেজে ধরা দেয় আমাদের কাছে । 



( চলবে )

Sunday 28 June 2020

নষ্টা





১।।
কাপড় খোলা উলঙ্গ শরীরটা সামনে টোপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।। লজ্জা শরম কিছুই নেই মাগীটার ।। শব্দটা বলেই মনের ভেতরটা কেমন ঝিনঝিনিয়ে উঠল ।। বেশ তো আজ রাতের জন্য তাকে কিনে নিয়েছি আমি কিন্তু তাই বলে কি ওকে একটুও সম্মান দিতে নেই ।। এরকম হাজার কথা ভাবছিলাম যখন , তখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোনাগাছির সেই বেশ্যাটি আমায় বলল , কি ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছিস আমায় ? শরীরটা তো খুলে দিয়েছি ।। খাবি তো খা না ।। এত বড় বড় মাই , একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না টিপতে , অন্তত হাত দিতে ।। কেমন যেন শরীর জুড়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ।। কত সহজে এই কথাগুলো বলছে , তাই ভাবছি ।। ও কি বোঝে না কি চাইছে ও আমার কাছে ।। সাহস করে উঠে গিয়ে ঘাড়ের কাছটা ছুঁয়ে দেখলাম ।। অমনি আমার দিকে ঘুরে বলল , এত লজ্জা কেন রে তোর ?? লজ্জা পেল কি করতে এসেছিস এখানে ?? 
কিছুই বলতে পারলাম না তৎক্ষণাৎ ।। তবে আস্তে আস্তে বিছানায় এনে বসালাম ওকে ।। একটা চাদর দিয়ে শরীরটা ঢেকে দিয়ে প্রশ্ন করলাম , তোমার বাড়ি কোথায় ? বললো , এই কলকাতাতেই ।। আমি বললাম , বাড়িতে কেউ জানে না তুমি এসব করছ ? দেখলাম , বাড়ির নাম শুনেই ওর চোখের কোনে দু ফোঁটা জল দেখতে পেলাম ।। বললো , বাড়িতে কেউ নেই ... বাবা , মা দুজনেই মারা গেছে ।। আর এক বয় ফ্রেন্ড ছিল , তারও কেউ নেই - দুটি বোন শুধু ।। তাদের দেখাশোনার জন্য একটা ফার্মে চাকরি করত ।। একদিন ট্রেন থেকে পড়ে দুটো পা কাটা পড়ে ।। সঙ্গী হিসেবে ওর দায়িত্বটুকু পালন করছি আমি ।। কিন্তু এইভাবে !! ওকে বললাম ।। ও বললো , তা কি করব বলুন , নষ্টা মেয়েকে যে ছেলেটি জীবনে জায়গা দিয়েছে , এই অনেক নয় কি ?? নষ্টা !! শুনেই কেমন ঘাবড়ে উঠলাম ।। কি বলতে চাইল ও আমাকে , এই জীবনটার কথা নাকি অন্য কোন ইতিহাস ওর জীবনের !!

২।।
রাত গভীর হতে লাগল ।। এদিকে আমার সামনে সেই নষ্টা , আর পিছনে অনেক দায়িত্ব ।। তার উলঙ্গ সেই শরীরটা মাঝে মাঝে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছি , দেখেছি তার উরু নাভি বা বক্ষের ডগায় হালকা চুম্বন করে ।। কিন্তু প্রতিবার এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হয়েছে , আমার জন্যই আজ এ নষ্টা নয় তো !! এভাবেই ধীরে ধীরে তার ঠোটেঁর ওপর ঝুকে ঠিক যখন একটা চুম্বন করতে যাব অমনি সে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিল , বলল , ওই স্থানটির অধিকার একজনের ।। আপনি বাকি শরীর নিয়ে যা খুশি করুন ।। আর তাছাড়া তখন থেকে কি চেটে যাচ্ছেন ?? কাজ করবেন না ?? একদিকে আমাদের মেয়েদের বিয়ের আগে যা নিষেধ , এরা কত সহজে তাই করে চলে রাতের পর রাত জুড়ে ।। বেশ অবচেতন ভাবেই বলে উঠলাম , না ।। শুয়ে থাকা শরীরটা উঠে বসল , মুখ ফুটে বলল , সে কি !! করবি না ।। তাহলে এত দাম দিলি কেন ?? 
তোর গল্প শুনব বলে , শুধু এটুকু বলে উঠলাম ।। একথা শুনে একবার মুখের দিকে চেয়ে দেখল (সমাজের ভাষায় ) মালটি ।। তারপর একটা মুচকি হেসে বলল , আমার গল্প কি আর শুনবি !! আমি কে বল !! সমাজ বলে বেশ্যা আর তোরা মাল ।। দিন রাত কত লোক নিজেদের শখ পূরণ করে এই শরীর কেন্দ্র করে ।। এই যে গোল গোল দুটো বলের মত বুকের ওপর , কত জন এটা চুষে যায় , কামড়ে যায় , টিপে যায় ।। যন্ত্রনা হয় , তবু সহ্য করি , কেন জানিস ?? একটা ভালবাসা আর একটা জীবনের কথা মাথায় রেখে ।। এই দেখ দুটো পা , তারই মাঝখানে এই যে ফুটো ওটাই সবার স্বর্গ -- আর যখন তারা স্বর্গ সুখ ভোগ করে তখন আমার নরক যন্ত্রনা ওরা বোঝে না আর বুঝবেও না ।। দিনে কতবার এই শরীর অচেনা লোকের সামনে খুলে দিই ।। তোরা ওই ইংরেজি তে কি যেন বলিস , হ্যাঁ , স্পার্ম -- ওর কত ফোঁটা এই শরীর ভরে পরে থাকে , তাকিয়ে দেখে না কেউ ।। ওর প্রতি কথায় আগুন বেরোচ্ছিল , মনে হল পুরো শরীর , মন জ্বলিয়ে ছারখার করে দেবে ।। আমাকে অবচেতন দেখে মেয়েটি একটা হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো , ছাড় , এসব শুনে লাভ নেই ।। তার চেয়ে নে দুধ খা , গর্তের মধ্যেকার স্বর্গীয় সুখে মেতে ওঠ , সেটাই ভাল হবে ।। আমি বললাম না , সেটা অন্যায় হবে ।। সবার মত আমিও হয়ে গেলে , আমি বলে কিছু থাকবে না , তারচেয়ে রাত অনেক বাকি তুই তোর গল্প বলে যা ।। আমি শুনবোই ।। 

৩।। 
বিয়ারের ক্যানটায় দুচুমুক দিয়েই আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ।। প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করলেও অবশেষে হার মানতেই হল ওর জেদের কাছে ।। এঁটো ক্যানে একচুমুক দিতেই হল শেষমেষ ।। তারপর আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল , " এই যে নষ্টা কে দেখছিস , সে একদিন ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল ।। আমি বাংলায় মাস্টার্স ।। " কথাটা শুনে কেমন যেন অবাক হয়ে গেলাম ।। একজন মাস্টার্স আজ এই ব্যবসায় ।। ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না কথাগুলো ।। ও কিন্তু বলে চলল , আমার নাম স্বপ্না , স্বপ্না চৌধুরী ।। অনেক স্বপ্ন বুকে ছিল একদিন ।। বাবা একটা ইস্কুলের মাস্টার ছিল আর মা একজন গৃহবধূ ।। টাকার অভাব হয়ত ছিল , কিন্তু কোনদিন কোন কষ্ট পেতে হয়নি আমায় ।। যখনি যা চেয়েছি পেয়েছি ।। কিন্তু ভাগ্য আমার ওপর খুশি ছিল না ।। এটুকু বলে একটা সিগারেট ধরালো নষ্টা ।। আমাকেও অফার করে কিন্তু আমি মানা করে দিই ।। এই দেখে এক গাল হেসে বলতে শুরু করল সে আবার , কোথায় ছিলাম আমরা , হ্যাঁ , বাবা আর মা আর আমার পোড়া কপাল ।। তখন কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি সবে ।। ক্যানিং যাওয়ার পথে একটি বাস এক্সিডেন্ট.... এত দূর বলেই কাঁদতে শুরু করে দেয় সে ।। তাকে স্বান্তনা দিতে বুকে জড়িয়ে ধরি ।। সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে ।। কি বলব কিছুই ভেবে না পেয়ে শুধু বলে উঠলাম , তারপর ?? নিজের চোখ মুছে নিয়ে আবার এগোতে শুরু করল নষ্টা ।। তারপর !! সেই বিভীষিকাময় দিন গুলো ধেয়ে এল আমার দিকে ।। আমার দায়িত্ব নিল আমার পিসেমসাই ।। পুরোনো কষ্ট গুলো তখনও ভুলতে পারিনি আমি , আর তারই মাঝে শুরু হল আমার ওপর জোর জুলুম অত্যাচার ।। বাড়ির সব কাজ করতে হত - না করলে ভাগ্যে জুটত মার ।। অসহ্য !! সে দিনগুলো ।। তারচেয়ে এই দেহবেচা অনেক সোজা ।। হ্যাঁ , এখন না হয় লোকে আমায় নষ্টা বলে , তাতে কি হয়েছে ?? শরীরে আঁচড়ায় , কামরায় , মাল দিয়ে সাজিয়ে দেয় বুক থেকে পেট ।। কিন্তু , বুঝলি , তাতেও অনেক শান্তি আছে ।। ওটা ছিল নরক আর এটা স্বর্গ না হোক , তারই কাছাকাছি কিছু ।।

৪।।
ঘড়িতে তখন দুটো বাজে ।। নষ্টা বলে চলেছে তখনও নিজের নরক যন্ত্রণাটা ।। পিসেমসাই ও পিসিমা কিভাবে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালাতো সবই আজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল তার ।। আর আমি এই ভেবে অবাক হয়ে উঠছিলাম যে একজন শিক্ষিত মেয়ে এই পথ কেন বেছে নিল ।। কি এমন ঘটল তার জীবনে ।। নষ্টা হয়ে সে এই পাঁকে পা দিল না কি সে এখানে এসে নষ্টা হয়ে উঠল ।। 
বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে নতুন একটা বিয়ারের ক্যান খুলে বসল সে ।। গল্পের নেশা ইতিমধ্যে আমাকে পেয়ে বসেছে ।। তর সইছিল না তাই বলেই ফেললাম , তুমি নষ্টা কি করে হলে ? প্রশ্নটা শুনে কেমন থমকে গেল মেয়েটি ।। বললো , সেটা তো আপনারাই বানিয়েছেন আমাকে ।। একজন ধর্ষিতাকে সমাজ যখন ন্যায় দিতে পারে না , তখন তার কাজ করার অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হবে ? ধর্ষিতা !! শুনেই চমকে উঠলাম ।। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো , অবাক হলেন নাকি !! হ্যাঁ আমি একজন ধর্ষিতা ।। এই সমাজ আমাকে করে তুলেছে পতিতা আর আমি শুধু সমাজের আদেশ পালন করছি মাত্র ।। 
কি সব বলছ তুমি ? কে তোমায় ধর্ষণ করল ?? বেশ অবাক হয়েই প্রশ্নটা পেড়ে দিলাম নষ্টার সামনে ।। আমার চোখে চোখ মেলাতে পারল না ।। ওর মুখে ঘেন্যা ভাবটা স্পষ্ট ফুটে উঠল ।। তারই মধ্যে আস্তে করে বলল , পিসেমসাই ।। সেই রাতটা কোনদিন ভুলব না আমি , আমাকে ঠেলে দেওয়া হল বেশ্যাদের পথে ।। বাড়িতে পিসেমসাই আর আমি , পিসিমা গেছেন বাপের বাড়ি ।। দরজাটা ভেজিয়ে পড়তে বসেছি একটু , ভিতরে ঢুকলেন পিসেমসাই আমার ।। ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিলেন ।। আমি বললাম , কি করছ !! কিছু না বলে পাগল কুকুরের মত আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল , স্কার্ট টপ ছিড়ে ফেলে দিলেন নিমেষের মধ্যে ।। আমি তখন উলঙ্গ হয়ে পড়ে , তিনিও উলঙ্গ হলেন আমার সামনে ।। লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না উনার দিকে ।। ওকে থামিয়ে বললাম , তুমি সব হতে দিলে , চ্যাচাওনি ।। বললো , সে সুযোগ দেয়নি ।। আমার মুখ বেঁধে বুক পেট কামড়ে খেল কুত্তাটা ।। পড়ে জানাওনি কাউকে ।। মুচকি হেসে বললো , মেয়ে তো আমি ।। এত সহজ হয় না আমাদের পক্ষে এসব কিছু লোককে জানান ।। আর এই সুযোগটাই নিল কুত্তাটা আবার ।। টানা সাতদিন বন্ধ ঘরে চলত আমার যৌনতার পরীক্ষা ।। এসব কিছু আর সহ্য করা যাচ্ছিল না ।। 
কি করলে তুমি ? ওকে জিজ্ঞাসা করলাম ।। নষ্টা একটা সিগারেট ধরাল আমাকে একটা দিল ।। আমি এবার মানা করতে পারি নি ।। ধোয়ার ওপাশ থেকে একটা শব্দ ভেসে এল এবার , খুন ।। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যাই ।। পুলিশ অনেক খুঁজেছিল কিন্তু পাইনি আর তার একমাত্র কারণ আমার বয়ফ্রেন্ড অনিমেষ হাহা ।। বুঝলাম সম্পূর্ন নামটা এড়িয়ে গেল ।। এদিকে ও বলে চললো , আমাকে নিজের ঘরে দীর্ঘ তিন বছর লুকিয়ে রেখেছিল ।। যেদিন কোর্ট পিসেমসাই কে ধর্ষক উপাধি দিয়ে হত্যাটাকে একটা সেলফ ডিফেন্স ঘোষণা করল , সেদিন প্রথম আত্মসমর্পণ করলাম কোর্টে ।। আমাকে বেকসুর খালাস করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সমাজের চোখে আমার পরিচয়টা সম্পূর্ণ বদলে গেছিল এর পর থেকেই ।। ওদের কাছে আমি এখন হয়ে গেছিলাম একজন নষ্টা , যার কোন স্থান নেই এই সমাজে ।। এখন আমার একটাই পথ বাকি -- আত্মহত্যা বা সুইসাইড ।। বহুবার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু অনিমেষ আমাকে মরতে দেয় নি ।। তার দুই বনের পাশাপাশি আমাকে সম্মান দিয়েছিল , পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছিল নিজের স্ত্রী র মতন ।। এটা ঠিক সামাজিক মতে আমরা এখনো অবিবাহিত , কিন্তু মনের আঙিনায় আমরা স্বামী স্ত্রী ।। আর তাছাড়া বিয়ে মানে তো মনের মিলন , কি বলেন বাবুমশাই , এতদূর বলেই হা হা করে হাসতে আরম্ভ করল পাগলিটা ।।

৫।।
নষ্টার জীবনের এক অন্ধকারময় অধ্যায় পার করে এগিয়ে এসেছে জীবন আজ রাতে ।। সকালের আলো একটু একটু করে ফুটে উঠছে ।। এদিকে নষ্টার সেই প্রাণ খোলা হাসির মধ্যে কেমন একটা কষ্ট পরিস্কার ফুটে উঠছিল ।। আস্তে করে নষ্টা কে থামাতে চাইলাম , কিন্তু ওর ওই প্রাণ খোলা হাসি , হোক না সেটা বিদ্রুপ মাত্র , তবু থামাতে দিল না ।। ক্রমাগত বেরিয়ে আসা হাসিটা থামতে বেশ সময় নিল ।। তারপর আবার শুরু করল সে ।। আমরা দুইজন ও ওর দুইবোন একসঙ্গে দিব্বি থাকছিলাম , এর পর থেকে ।। ছেলেটা একটা প্রাইভেট ফার্মে মজদুর খাটতে ঢুকে গেছিল , মাসে ওই হাজার চারেক মাইনে ।। খুব সকালে ট্রেন ধরতে হত ওকে ।। ও বেরিয়ে গেলে আমিও বেরতাম কোনো কাজ যদি জোটে ।। অনেক জায়গায় গেছি , অনেকের দ্বারস্থ হয়েছি ; জানো কি উত্তর পেয়েছিলাম ।। আমি বললাম , কি ? বললো , লোভে ভরা চোখ দুটো এই মাই দুটো দেখলো কাপড়ের ওপর থেকে , তারপর হাতটা এগিয়ে এনেও থামিয়ে দিত , তারপর বলত , বেবি , ইউ আর সো হট ।। আজ রাত ... একজন দুজন নয় , পাঁচ পাঁচটি অফার এসেছিল আর আমি পালিয়ে বেরিয়েছি শুধু ।। মাস্টার্স এর দাম এত সস্তা জানলাম সেদিন প্রথম ।। আমার ডিগ্রি গুলোর থেকে আমার শরীরের দাম তখন অনেক বেশি ।। অন্যদিকে বাকি যারা একটু ভদ্র তারা আসল গল্পটা না জেনেই , তাড়িয়ে দিত ।। এ সমাজ জংলীদের জন্য , বন্যদের জন্য , ধর্ষিতা ও খুনিদের জন্য নয় ।। দিন কেটে রাত হত আর রাত কেটে দিন ।। আমার জন্য এ সমাজের কাছে কোন মূল্য আর শেষ ছিল না ।। এত বড় মাপের ব্যর্থতা আমি জীবনেও দেখি নি আর তাই হয়ত আস্তে আস্তে আরো ভেঙে পড়ছিলাম ।। কথায় আছে , অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায় , আমার ভাগ্যটাও ঠিক সেরকম ।। একে কোথাও কোন চাকরি জুটছে না যখন , তখন একদিন বিকেলে আর এক দুঃসংবাদ ধেয়ে এল অনিমেষের বন্ধু তথা সহকর্মী আতিফের কাছ থেকে ।। হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়িতে এসে দরজা ধাক্কা দিতে লাগল ।। তখন দুই বোন ইস্কুলে আর আমি একটু জিরাচ্ছি শুয়ে শুয়ে ।। আতিফের গলা আমার বেশ চেনা , অনেক বার অনিমেষের সাথে বাড়িতে এসেছে ।। নষ্টাকে আমার সাথে ওই ঘরে এই প্রথম বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হল ।। ওকে এই রকম খোলামেলা দেখে আমি আরও অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম ।। আজ ও কোনভাবেই আমার নষ্টা নয় , আজ ও এক স্বপ্নময়ী স্বপ্না ।। কিছুক্ষনের জন্য ঘর ছেড়ে বাইরে গেছিল , জানিনা কোথায় ,তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে এল , দেখলাম ওর হাতে একটা ছবি ।। আমাকে দেখিয়ে বললো , এই আমার অনিমেষ ।। কি সুন্দর না !! দেখুন ।। আজ কিন্তু এই সৌন্দর্যে কলঙ্ক লেগে গেছে ।। সেদিন আতিফ বাড়িতে এসে জানায় যে অনিমেষ ট্রেন থেকে পড়ে গেছে , তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।। খবরটা সেদিন ঠিক কি প্রভাব ফেলেছিল সেটা বলতে পারব না , আপাতত , দেখলাম ওর দু চোখ বেয়ে জল বয়ে চলেছে ।। হঠাৎ সম্পূর্ণ অবচেতন হয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়ল নষ্টা ।। কি করব কিছুই বুঝতে না পেরে আস্তে করে ওকে সামনের বিছানায় শুইয়ে দিলাম , কয়েক ফোঁটা জল ছিটিয়ে দিলাম পাশে রাখা জগ থেকে ।। ধীরে ধীরে চোখ খুললো নষ্টা ।।

৬।। 
বাইরে পৃথিবী যখন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে  , তখন একটি বন্ধ ঘরের ভিতরে আমরা দুজন এক গভীর আলাপে মত্ত ।। স্বপ্নার বলে যাওয়া গল্পের আড়ালে আমি খুঁজে দেখছি তখন হাজার হাজার দেহ ব্যবসায়ীর যন্ত্রনা ।। এরা কেউ শখ করে এই কঠিন পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসেনি ।। হয়ত এমন স্বপ্নারা অনেক কষ্টে এই পথ বেছে নেয় , তবু একটা প্রশ্ন তো মনে জেগে ওঠেই ; এরাও এই গণতান্ত্রিক দেশের একটি অঙ্গ ।। এদের ভোটে সরকার গঠন হয় যখন , তখন সরকার এই রকম হাজার হাজার স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের এই অন্ধকার পরিবেশ থেকে বের করে এনে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগ কেন নেয় না !! 
এরাম হাজার প্রশ্নের ঝড় যখন মাথা জুড়ে তোলপাড় হয়ে চলেছে তখন দেখলাম পাশের বিছানা ছেড়ে উঠে বসেছে আমার নষ্টা ।। পাশে গিয়ে বসলাম তার , বললাম , তোমার ঠিকানাটা দেবে ?? একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো , টিটাগর ।। আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে , যাবার আগে একটা কার্ড ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে গেলাম -- এই আমার ফোন নম্বর ।। কাল যোগাযোগ কর আর এখন আমি নিচে দাঁড়াচ্ছি , আমার সঙ্গে চল ।। এ পৃথিবী স্বপ্নার , নষ্টাদের নয় ।।

Friday 26 June 2020

রেল কলোনির আড্ডা ( পর্ব ৩ )

সিমজুরির পাস দিয়েই বয়ে চলেছে অজয় নদ আর এই নদের ধারে অবস্থিত চিত্তরঞ্জনের মানুষদের সুখ আর দুঃখের দুই কেন্দ্রস্থল । জীবনের মুখাগ্নি হয় এই অজয় নদের ধারে শ্মশানে আর শীতের আমেজ বুকে জড়িয়ে নিয়ে এই অজয় তীরেই হনুমান মন্দিরে মানুষের ঢল নামে বনভোজনের জন্য । নদের ওপাশে ঝাড়খন্ড আর এই নদীর বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের মাঝে এক সীমানা হয়ে বয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে । উৎপত্তি স্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে গোটা ঝাড়খণ্ড অতিক্রম করে অজয় চিত্তরঞ্জনের কাছে সিমজুরি দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে৷ সিমজুরির কাছেই অজয় নদের বিস্তৃতি সবথেকে কম , তবে প্রবল বর্ষায় অজয়ের বিস্তৃতি বিশাল আকার ধারন করে । তবে অন্য সময়ে নদে সেরকম জল থাকে না । এ অবস্থায় চিত্তরঞ্জন কতৃপক্ষ দ্বারা অজয়ের ওপর সেতু নির্মাণের ফলে বাংলা ও ঝাড়খণ্ড এর মধ্যে দূরত্ব অনেক কম হয়েছে ।
সিমজুরীর দক্ষিণ  দিকে, বড় কালীমন্দির অবস্থিত । এখানে মা কালী, " মা ত্রিপুরেশ্বরী " নামে পরিচিত ।  সিমজুরীর উত্তর  দিকে " আদি কালীমন্দির" যার  চারিদিকে একসময়ে ছিল কেওট বা জেলেদের বাস । সিমজুরি চিত্তরঞ্জন দ্বারা অধিগৃহিত হলে এরা চলে যায় কুশবেদিইয়া গ্রামে । এই জেলেদের আরাধ্য দেবী হিসাবে আদি কালি মন্দিরে, মা কালী এবং শিব লিঙ্গের পাশাপাশি মা মনসা র পূজাও হয়ে থাকে । এই আদি কালি মন্দিরের আর এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো মধু ঠাকুর , মন্দিরের পুরোহিত ; যিনি জন্মসূত্রে জেলে ছিল বলেই শোনা যায় । 


পুজোর হাজার ইতিহাস জড়িয়ে আছে চিত্তরঞ্জনের কোনায় কোনায় । নর্থ যদি হয় দুর্গার এলাকা , তবে সিমজুরি নির্দ্বিধায় বলা চলে কালিপুজোর ডেরা । অবশ্য এ অঞ্চলের অজয় তীরের ছট , দুর্গাপূজাও মানুষের নজর কেড়ে এসেছে সবসময় । রাতজাগা চিত্তরঞ্জনের ইতিহাস নিয়ে একটা আলোচনা করবো অবশ্যই । আপাতত শহরের দিকে নজর দেওয়া যাক । 
কালি পুজোর উজ্জ্বল রাত চিত্তরঞ্জনকে বহু যুগ ধরে আলোকিত করে আসছে । সিমজুরির বড় কালি মন্দিরটি তখন সবে সেজে উঠছে । মন্দির দেখলে যে কারোর মনে হবে ওটি একটি পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয় । সময়টা ওই ষাটের দশক । বাউন্ডারি বিহীন সেই মন্দিরে কমিটি বলে কিছু না থাকলেও ভক্তি বা উল্লাসের কোন ঘাটতি ছিল না । তখন পূজারী ছিলেন চট্টরাজ মহাশয় । কিন্তু হঠাৎই কিছু বাক বিতন্ডার জেরে তাকে মন্দির থেকে অপসারিত হতে হয় । নতুন স্থায়ী পূজারী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নিত্যসেবার দায়িত্ব পড়ে শ্রী যুক্ত কেষ্ট চক্রবর্তী মহাশয়ের উপর আর চট্টরাজ মহাশয়ের স্থান হয় ৮৭ ও ৮৮ নম্বর রাস্তার মধ্যে অবস্থিত ছোট কালিমন্দিরে । এই ছোট কালি মন্দিরটিও চিত্তরঞ্জনের প্রাচীন ও আদী কালি মন্দির । 


আশি ও বিরাশি নম্বর রাস্তার মাঝখানের খোলা মাঠে অবস্থিত সিমজুরী কালী মন্দিরটিই হলো চিত্তরঞ্জনের ছোট কালি মন্দির বা আদি কালি মন্দির । এই মন্দির তখন ছিল ছোট্ট এক টিনের চালে তৈরি । এই ভাবে টিনের চালে মন্দিরের ভেতরে পুজো হতে হতে ঠিক করা হয় মন্দিরের পরিধি বাড়াতে হবে। কিন্তু রেলের হাত থেকে জমি আদায় করা সম্ভব নয় । তখন সি এম ই অরুণ মুখার্জির স্ত্রী এই মন্দির তৈরির তৈরির ব্যাপারে উদ্দোগ নেন। তিনি রেলের কাছে আবেদন জানান, মন্দিরের জায়গা থেকে দূরে কর্নারে যে কুয়ো আছে সেই কুয়োকে ঘিরে এই মন্দিরের চারিপাশে পাঁচিল তুলে দেওয়া হোক অন্যথা এই মন্দিরের আশে পাশে যে খালি জমি পরে রয়েছে হটাৎ করে সেখানে যদি আন অথরাইজড অকুপেশন হয়ে যায় তাহলে আশে পাশে যে স্কুল বা কোয়ার্টার আছে সেগুলো ডিস্ট্রাব হয়ে যাবে। রেলও সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে মন্দিরের মাঠের ভেতর কুয়ো সমেত রেলের টাকায় পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দিল।


রেল যদিও এই পাঁচিল ঘিরে দিয়েছিল, তবু এই পাঁচিলের ভেতরের জায়গা কিন্তু রেলের নয়। এর পর থেকে সেই ঘেরা জায়গার ভিতরে যাত্রাপালা আয়োজন করা হতো এবং তার থেকে প্রাপ্ত লাভের টাকায় মন্দিরের কাজ করা হতে লাগলো । 


১৯৩০ সালের অনেক আগে থেকেই,  ছোট, সমৃদ্ধশালী ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসেবে সিমজুরী, ফতেহপুরের অস্থিত্ব ছিল । দুটি গ্রামই ছিল সাঁওতাল অধ্যুষিত পরগণা । শস্য শ্যামলা চাষের জমি, প্রতি বাড়িতেই গবাদিপশু,হাঁস-মুরগী, মহুয়া ফল-ফুলের রসে তৈরি হাঁড়িযা এসব নিয়েই সেই সাঁওতাল পরিবারগুলি সুখে বসবাস করতো । প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার, সিমজুরীতে হাট বসতো । সেই হাটে তারা চাল, ডাল, তরিতরকারি, শাকসবজি, দুধ, দই, হাঁস-মুরগী, হাঁড়িযা বিক্রির জন্য নিয়ে আসতো । কেওট পাড়ার জেলেরা মাছ ধরে আনতো । সেসব বিক্রি করে সহজ সরল এই মানুষগুলোর সংসার বেশ চলে যেতো । বর্তমান ৮৫ নম্বর রাস্তাই ছিল তৎকালীন এই হাটের কেন্দ্রস্থল । শ্রী পরেশ ব্যানার্জির, হোমিওপাথি চালার ঘর পেরিয়ে তেঁতুল গাছটি অবধি এটি বিস্তৃত ছিল । বলে রাখি শ্রী পরেশ ব্যানার্জি ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাইয়ের ছেলে এবং একজন স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক । বহু গরিব দুখিদের তিনি বিনামুল্যে চিকিৎসা করে গেছেন । স্বয়ং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজে এসেছিলেন তাঁর এই দাতব্য চিকিৎসালয়ে । এ ঘটনা নিজেই এক বিরল ও গর্বের ইতিহাস । বর্তমানে কলকাতায় তাঁর ছেলে পরিমল ব্যানার্জি হোমিও চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন । তাঁর অপর ছেলে প্রশান্ত ব্যানার্জিও কলকাতার নামি হোমিও চিকিৎসক ছিলেন । তবে তিনি কয়েক বছর আগে পরলোকগমন করেছেন ।  এখন সেই তেঁতুলগাছ ও নেই, নেই সেই পরেশ ব্যানার্জির দাতব্য হোমিওপাথি ঔষধের চালাঘর।  ১৯৫০ সালে সিমজুরির অন্তরভুক্তিকরনের পর ; ১৯৭৪ সালে নগরোন্নয়ন করতে গিয়ে, চিত্তরঞ্জনের প্রশাসন নির্দয় হাতে, ঐ তেঁতুল গাছটিকে হত্যা করেছিল।



( চলবে ) 

Tuesday 23 June 2020

আমি বিদ্রোহী





উৎসর্গ : প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম 



১।।


আমি বিদ্রোহী



আমি বিদ্রোহী , 



অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করি নি কোনদিন । মানুষ যেখানে বঞ্চিত , উপেক্ষিত ; যেখানে যখন লাঞ্ছিত এ যুগের নারায়ণ , আমি তখন কলম হাতে পথে নেমেছি 

আক্রমণের ধারে বিদ্ধ করেছি দারিদ্র , অসহায়তা , অপরাধ । আমি জানি আজ মানুষের মনে লোভ অসীম আর তাই তো বারবার কবিতায় আমার ফুটে উঠেছে চাহিদা লোভহীন । আমি তোমাদের হতে চেয়েছি , জানিনা কতটা পেরেছি । তবু বারবার অহংকার করে বলেছি এক সীমাহীন পৃথিবীর গল্প ।

আমি বিদ্রোহী 



জীবনে যা কিছু অশুভ , যা কিছু অপ্রিয় আমি বারবার , প্রতিবার তারই বিরুদ্ধে লিখে গেছি । কলম , আমার কাছে একটি অস্ত্র এবং সেই অস্ত্রের ছোঁয়ায় লাল ওই আকাশের লালিমাটিকে মুছে দিয়ে নীলাকার রূপে আবার রঙ ভরেছি ।



আমি বিদ্রোহী , 



বন্ধুগন , আমি বিদ্রোহ করেছি এই সমাজের গলদের বিরুদ্ধে , সমাজ গড়বো বলে । তবে , নেতা হয়ে নয় , একজন সামন্ত হয়েই আমার আগ্রাসন । কবিতা কে ভালোবেসে , ঈশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছি নীরবে । আমি কবি হতে আসিনি , কবিতা বিলিয়ে দিতে এসেছিলাম । প্রেমিক হতে আসিনি , প্রেমিকার জীবনের অংশ হতে এসেছিলাম । কিন্তু এই পৃথিবী পাঠক দিলো না , প্রেমিকা আশ্রয় দিল না মনে । এতটুকু অনুরোধ কেউ প্রতিবাদী নেতা বানিয়ে দেবেন না ।



ভালো থাকুক নক্ষত্রপুঞ্জ , ভালো থাকুক নতুন গ্যালাক্সি 

শুধু দয়া করো পৃথিবী ,আমার নিঃশব্দ সৃষ্টিগুলো 
নীরব রেখো , আমি নীরব হয়ে যাবার পরে 



২।।



আমি বিদ্রোহী 



বিদ্রোহ করেছি নিজের বিরুদ্ধে

বিদ্রোহ করেছি নিজের বস্তা পচা আদর্শের বিরুদ্ধে 
বিদ্রোহ করেছি এমন হাজার হাজার 
নীতির বিরুদ্ধে যা এতদিন ধরে জন্ম দিয়েছে 
এক পঙ্গু সমাজ , পঙ্গু সংস্কৃতির ।



আমি বিদ্রোহী 



হাজার হাজার অভিশাপ তাই আমার মাথায় 

সিঁদুর হয়ে জড়িয়ে থাকে 
সত্যি , সমাজের কাছে বরাবরই দায় 
অসহায় করে দেয় যে অসহ্য দাওয়াই ।



বন্ধুগন , আমি জানি 

এই সমাজ আমাকে নাম দেবে না , 
সম্মান দেবে না
কোন মনে আমি আশ্রয় পাবো না 
হৃদয়ের ভালোবাসা পাবো না 
সবাই আঙ্গুল তুলবে আর চিৎকার করে 
আমায় পাগলের শ্রেণীতে স্থান দেবে --- 



কারন 



তারাও ভীত আমার এই সামন্তী আগ্রাসনে । 

তাই আমি বিদ্রোহী , কলম আমার অস্ত্র 
স্বপ্ন ভালোবাসাময় সংসার ।



আমি বিদ্রোহী ছিলাম না । কিন্তু এই সমাজ আমায় হত্যা করেছে বারবার । ভালোবাসায় মুখ লুকিয়েছিলাম ,

ভালোবাসা আমায় পরিত্যাগ করেছে । 
অনেক দুঃখ সয়ে গেছি , আর তারপর অবশেষে 
বিদ্রোহ করেছি । 



বন্ধুগন , 



আমি আগেও বলেছি 

আমি প্রেমিক হতে এসেছিলাম , কিন্তু 
এই নির্দয় সমাজ 
আমায় প্রেম দেয়নি । তাই কলমের ধারে 
রক্তকনা পান করছি আমি । 



চাইলে আমায় শুলে দিও , অথবা 

হত্যা করো এই সময়ে । 
আমি বদলের স্বাদ চেখেছি , 
নিজেকে বদলের ধাঁচে মেলে ধরেছি 



তারপর 

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ....



ফিরে আসি অথবা নাই আসি 

মনে রেখো 



আমি বিদ্রোহী নই 

ভালোবেসে তাকে আমি অপরাধী একজন ।




৩।।

আমি বিদ্রোহী 



বিদ্রোহ করেছি সমাজের সেই জীর্ণ পচা আদর্শের বিরুদ্ধে , যেখানে একজন নারীকে ওরা বিদায়ের নামে ঠেলে ফেলে দেয় নোংরা জলের গভীরে । আচ্ছা , এই নারী মূর্তি ঘিরে কাল কত উন্মাদনা ছিল । কত নিষ্ঠা ছিল । কত আনন্দ ছিল । কারন , এই নারী একটি লাল সুতোর গেরোয় এতদিন বন্দি ছিল তোমাদের প্রাসাদে ।

বিদায়ের দিনে গেরো গেছে ছিঁড়ে , এবার তার মুক্তির সময় , স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে সে । তাই সমাজ তাকে তুলে ফেলে দিল গঙ্গার গভীরে ।



আমি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি । 



নারী মানে আমার চোখে দেবী নয় শুধু , নারী মানে আমার চোখে মা , কন্যা , বোন , স্ত্রী , প্রেমিকা । আমার কাছে তাদের সম্পর্ক ভালোবাসার আর এই ভালোবাসার টানে আমি হেঁটে চলেছি অনন্ত পথ এই জীবনে । ভালোবাসা আমায় ত্যাগ করেনি , আমি বুঝেছি । শুধু একজনকে ঘিরে এ সংসার নয় । এই দেশ, এই সমাজ আমার চোখে এক একজন প্রেমিকা । 



আজ জলাশয়ের ওপর আলো পড়েছে অনেক । সেই আলো সমাজকে কবে আলোকিত করবে ঈশ্বর জানেন । 

কবে প্রেম ধরা দেবে মানুষে মানুষে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঈশ্বর জানেন । 



আমি বিদ্রোহ করেছি । সেই প্রেম প্রতিষ্ঠার জন্য আমি বারবার বিদ্রোহ করেছি ।



তাই আমি বিদ্রোহী । প্রেমিক বিদ্রোহী ।




৪।।



আমি বিদ্রোহী ।



বিদ্রোহ করতে আমি রণে নেমেছি । দারিদ্র দূরীকরণের নামে 

আমি দরিদ্রকে মিটে যেতে দেখেছি । আমি দেখেছি স্তন কাটা মায়েদের কান্না , 
আমি দেখেছি আড়াই থেকে সত্তরের ধর্ষণ হওয়া শত শত কন্যা । 
আমি দেখেছি উর্ধিধারীর দল , মিশে গেছে ঘুষের রঙে 
আমি দেখেছি এসি ঘরে জামাই আদর , চালায় নেতারা নিজেদের ওই কেতাবি ঢঙে ।



আমার কলম নিস্তেজ হয়েছে এ হিম শীতলতায় । 

তবু গর্জে উঠেছে 
যেখানে পেয়েছে রক্ত গরম করা অন্যায় আগুনের উত্তাপ ।
বন্ধুগন , 
তোমরা আমার বীর সৈন্যদল । তোমাদের একহাতে মনুষত্ব 
আর 
অন্যহাতে ধ্বংসরূপে ধর্মের অবস্থান ।
একহাতে তোমাদের প্রেম , ভালোবাসা 
আর 
অন্যদিকে হিংসার দাবানল ।
একদিকে তোমরা প্রেমিক শিশু 
অন্যদিকে নৃশংস আদিম পশু ।
যেদিন এই বাঁশির সুর থেমে যাবে , সূর্য আমার পশ্চিমে 
ঘুমিয়ে পড়বে 
সেদিন নবীর হাতে আমি কৃষ্ণের প্রেমের বাঁশি দেখতে চাই! 
সেদিন কৃষ্ণের কণ্ঠে আমি মোহাম্মাদের বাণী শুনতে চাই ।
মানবতার ধর্মের ডাকে , একসাথে লড়তে চাই শুধু।



সেদিন কবরে ঘুমিয়ে অথবা চিতায় শুয়ে 

আমি নিজে নিজেকে বলতে পারবো 
আমি বিদ্রোহী নই । একজন সফল প্রেমিক ।
সেদিন নিজে নিজেকে একটা উপহার ছেড়ে যেতে পারবো 
আমার ভালোবাসার জন্য , একটা সমাজ ।




৫।।

আমি বিদ্রোহী ।



ধর্মের নামে গোঁড়ামি যত দেখেছি 

ততই আমি দৃঢ় কণ্ঠে রুদ্ধ কলমের খোঁচায় 
প্রতিবাদ করেছি 
বলেছি সত্য , গেয়ে উঠেছি মানবের জয়গান ।
কিছু নিচ পাষন্ড আজও মতি ভুলে 
মানুষকে উপেক্ষা করে 
ধর্মের নামে বিভেদের খেলা খেলে ।



আমি বিদ্রোহ করেছি 

সেই ধর্ম , সেই চির প্রচলিত জীর্ণ 
পন্ডিত থেকে পুরোহিত ,
হিন্দু , মুসলমান , জৈন অথবা ক্রিস্টান 
বেদের শ্লোক থেকে আয়াত - এ - কুরআন ।



আমি বিদ্রোহী ।



বিদ্রোহ আমার রক্তে , যেখানে উপেক্ষিত মানুষ 

বিদ্রোহ আমার শর্তে , চাই মানুষের দেবত্বের অধিকার ।
আমি নানক পড়েছি , আমি পড়েছি বেদ কোরান বাইবেল 
অথবা ত্রিপিটক 
আমি বৌদ্ধ শুনেছি , শুনেছি কবিরের দোহা 
কিংবা 
লালন শাহের মানবিকতার গান ।



আমি ভক্তি দিয়ে সব মেনেছি 

যুক্তি দিয়ে সব পুঁথি ঘেঁটেছি 
গেছি মক্কা থেকে লুম্বিনী নগরে 
কৈলাশ থেকে জেরুজালেম 
আর তারপর 
সকলের জন্য লিখতে বসেছে 
বিদ্রোহী মন আমার 
মানবিকতার গূঢ় তত্ব ---
" সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপরে নাই " 



৬।।



আমি বিদ্রোহী ।



মন্দিরের বন্ধ ঘরে যে লক্ষ্মী ধর্ষণ হল কোজাগরীতে 

মসজিদের দালান জুড়ে যে পথিক ঝিমিয়ে ঘুমায় 
ক্ষুধায় মরে 
আমি তাদের জন্য ভগবানের ঠিকানা খুঁজেছি 
মানুষের দরবারে 
নেমে গেছি পথের ধুলায় , মানুষের গান বুকে জড়িয়ে 
বলেছি দৃঢ় কণ্ঠে ভাঙতে ওই পাথরের ইমারত 
যেখানে মূর্তি আছে সাজানো সারি সারি 
যেখানে কনায় কনায় ভরে আছে কুরানের পবিত্র বাণী 



আমি বিদ্রোহী 

ধর্মের জন্য বিদ্রোহ করেছি বারবার 
আমার লক্ষ্য শুধু একটাই ধর্ম প্রতিষ্ঠার 



আমি বিদ্রোহী 

জ্বলে উঠবো বারবার 
করেছি আর করবো বিদ্রোহ মানুষের জন্য 
হিন্দু , মুসলিম , ক্রিস্টান , জৈন , বৌদ্ধ , শিখ , পারসিক সব 
নিপাত যাক 
পৃথিবী জুড়ে শান্তি নামুক মানবিকতায় ।




৭।।



আমি বিদ্রোহী ।



রক্তের দাম আজ ঘামের থেকেও সস্তা 

জীবিত মানুষ আজ মৃত , অসহায় মূর্তির থেকেও অসহায় 
মানুষ আজ মানুষ মারে এক নাদেখা , অচেনা অদৃশ্যের লোভে 
আর কাড়ি কাড়ি কড়ি গলে যায় 
ওদের সেবায় ।



আমি বলেছি তাদের আহাম্মক 

যারা সেই অচেনা অশরীরির জন্য 
দূরে সরিয়ে দেয় জীবিত মানব প্রীতি ।
আমি তাদের সম্মান জানাতে অস্বীকার করিনি 
শুধু বলেছি তাদের নেশা , তাদের বদ অভ্যাসগুলো 
দূরে সরিয়ে রাখতে 
আমি আরও বলেছি তাদের জন্য কোটি টাকার বিছানা না সাজিয়ে 
অভুক্ত অসহায় মানুষের জন্য লক্ষ টাকার পান্তা থালা 
জোগাড় করা খুব কী কষ্টের কাজ ! 



এতেই তারা ক্ষেপেছে । 

বলছে আমি মহাপাপি । ঈশ্বর আল্লাহকে অস্বীকার করেছি ।



আর আমি বলছি 

হ্যাঁ তাদের পবিত্র বাণী মেনেই আমি আজ নাস্তিক হয়েছি । 
ঈশ্বর খুঁজতে গেছি এই সংসারে মানুষের মধ্যে 
কোন উপাসনালয়ে , ধর্মগ্রন্থে অথবা 
তাদের মিথ্যা অনুকরণকারীদের মধ্যে নয় ।
হ্যাঁ , আমি বিদ্রোহী 
একজন মানব প্রেমী বিদ্রোহী বীর ।



৮।।



বৃদ্ধ বলে যে সমাজ পুরাতনকে ছিঁড়ে ফেলতে চায় 

আমার কলম বিদ্রোহী হয়ে সেই সমাজেরই 
ধ্বংস দেখতে চায় ।
আমি বিদ্রোহ করি মানুষের জন্য 
বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য 
কিন্তু যখন দেখি বর্তমানের নামে ব্রাত্য অতীত 
তখন বিদ্রোহী কলম 
স্বজন ছেড়ে সেই অসহায় কাঁপাহাতের আঙ্গুল ধরতে 
ছুটে যায় । 
আমরা মানুষ । 
তবু কেন বেহুশ হয়ে পড়ি বারবার ! কেন দুদন্ড ওদের জন্য 
বাঁচতে পারি না 
যারা এত বছর আমাদের জন্য বেঁচে ছিল বারবার ।
আপনারা জানেন ,
আমি হত্যা , ধ্বংস , ভাঙ্গনের জন্য নামি নি 
আমি প্রেমিক সন্যাসী 
প্রেম বিলিয়ে দিতে এসেছি 
কিন্তু 
হে আমার যুবক সৈনিক 
এ প্রেম তো কেবল তোমাদের জন্য নয় ।
এ প্রেমে তাদেরও পূর্ণ অধিকার আছে 
যারা বয়সের ভার সহ্য করেও 
আজও তোমাদের জন্য দুয়া মাঙ্গে 
তবু আমি দেখছি 
তারা শোষিত হচ্ছে এই সমাজে বারবার 
তোমাদের এই দায়িত্বভরা দুহাতে  



আজ আমি নয় , 

আমার কলম বিদ্রোহী 
এই তোমাদেরই বিরুদ্ধে -- আগামীর যুব সমাজ ।



৯।।

আমি বিদ্রোহী 



কিছু নাদেখা স্বপ্ন হয়ে ফুটিয়ে তুলতে চাই । 

মুখপোড়া সব অন্ধ ভক্তের মধ্যে মুখখুলে 
একবার একটা প্রশ্ন করতে চাই । 
তাদের বিশ্বাসের কালো বন্ধনের মধ্যে দিয়ে 
দেখতে চাই কিছু যুক্তির শক্তি ।



আমি বিদ্রোহী সেজেছি তাই 

এই ভক্তি ব্যাপী পৃথিবীতে যুক্তির শক্তি 
একবার দেখিয়ে যাবো ভাই ।
বিনা কারণে যখন সংসারে , একটা পাতাও নড়ে না 
বিনা ছন্দে যখন কবিতায় , মেঘেরা সব গরুর মতো চড়ে না 
তখন 



আমি বিদ্রোহ করি 

আমাদের পাথরঠাসা সেই হৃদয়ের ভক্তি সাগরে 
তোমাদের সংসার যখন ঘুষখোরে ঠেসে আছে 
তখন ঈশ্বর কি একটা দানাও পক্ষপাত করবে না !
যখন তোমাদের হিসাবে দুয়ে দুয়ে ছয় হতে পারে 
তখন তিনি কেন তেলে জলে প্রদীপ জ্বালাবেন না !



আমি দেখেছি প্রচুর ভিড় 

ওই শালা মৃতদের ঘিরে -- 
আমি দেখেছি মানুষ বিকিয়ে দেয় নিজেকে 
ওই শালা ভন্ডদের পায়ের তলে ---
আমি প্রেমিক হয়ে ব্যর্থ হয়েছি 
তাই প্রেমের পথ গড়তে পথে নেমেছিলাম 
এই ভক্তি রুপি পাথর এখন সামনে আমার
তাই বিদ্রোহী হয়েছি 



শুধু ভক্তিটুকু যুক্তিতে পরিবর্তন করবো বলে । 



১০।।

বিদ্রোহ মানে , তিনটে অক্ষর নয় 
বিদ্রোহ মানে , শুধু প্রতিবাদ নয় 
বিদ্রোহ মানে , একটা ভাবনা মানুষের জন্য 
বিদ্রোহ মানে , ভালোবেসে পাশে দাঁড়ানো 
একটু ভালোবাসার জন্য ।



আমি বিদ্রোহী 

মানুষের কথা বলে যাই গানে গানে তাই 
আমি বিদ্রোহী 
মানুষের কথা লিখে যাই কলমের ভাষায় 



কোথাও দেখি মানুষের শরীর জুড়ে 

অন্যায়ের কালসিটে 
কোথাও দেখি মানুষের মনের গভীরে 
ভাঙ্গনের রক্ত ছিটে 



আমি নীরব হয়ে দেখেছিলাম ধর্মের ছলনা 

নারী হয়ে ওঠে কেমন করে পুরুষের খেলনা 



আমি বিদ্রোহী তাই কলমের হাত ধরে 

সচেতন করে যাই চিরকাল ভালোবাসার অক্ষরে ।



১১।।



চলুন আজ মানুষের বিরুদ্ধে পথে নামা যাক ।

মানুষ মানে আমরা সবাই , মান আর হুসে ভরা 
প্রত্যেকেই ।
আমাদের আচরণ আজ উন্নতির কেনা গোলাম 
বিজ্ঞানের দাস হয়ে আজ আমরা সুখী 
স্বার্থপর হয়ে উঠেছি আমরা প্রত্যেকে -- এ যুগের জনগন ।
মোবাইলের রেডিয়েশন হোক আর পারমানবিক বিস্ফোরণ 
আজ আমরা সময়কে মুঠোয় বাঁধতে চেয়েছি 
বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা সবাই হিতের বিপরীতে হেঁটে 
হানির মন্ত্র মেনে চলেছি ।



আজ বিদ্রোহী এই মানুষটিও লজ্জিত 

কারন সে নিজেও এই পথেরই পথিক 
পৃথিবীকে নিজের বাপের মনে করে 
আমিও তো সবার মতোই স্বার্থের রঙে রঙিন ।



আমি বিদ্রোহী নই আজ 

একজন কলঙ্ক , হত্যাকারী পাষন্ড নিচ 
সবারই মত 
ধিক্কার তাই আমাকেও , কলম আমার জানাতে এসেছে 
চিরকালের মত ।



যেখানে অপরাধই শত অংশে ভরা 

সেখানে শাস্তি দেবে কে ?
হে প্রভু , এই সামন্তের অনুরোধ শুনুন 
আমাদের অতীত ফিরিয়ে দিন 
আগেকার মতন ।



১২।।

সাবধান !! 
পদে পদে অচলায়তন । ডিগ্রিহীনরা আজ মসনদে আর 
ডিগ্রিধারী সব জুতোর তলায় ভুপিষ্ট । 
এ গল্প তোমার গল্প , আমার গল্প ; এই দেশের প্রত্যেকের গল্প 
এ গল্প সাম্রাজ্যের পর সাম্রাজ্যের গল্প 
কবরের তলায় ঘুমিয়ে থাকা শোষিতদের গল্প 
এ গল্প যুগ যুগান্তরের বার্তা বয়ে আনে মিষ্টতার মধ্যে ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখো ; পরাধীন মন্দিরে 
পরাধীন হিন্দু থেকে মুসলমান --- 
আমাদের ঔকাদ ছিল কতটুকু জনাব সেদিন 
জুতোর তলায় চামড়ার মাঝে আটকে পড়া পেরেকের মতো ।
তারপর পাল্টে গেল পাতাটা ; স্বাধীনতার মুখোস পড়লাম 
সেদিন ব্রিটিশ এর রাজদণ্ড মিশেছিল ধুলায় 
কিন্তু স্বাধীন আমরা কোথায় হলাম ।
জয় জয় মহারাজ , তুমি ঈশ্বর হয়ে বসলে এসে মসনদে 
গণতন্ত্রের নাম ধরে আসন লুটে গেছো সত্তর বছর ধরে 
আমরা সহ্য করেছিলাম সব --- 
তবে আর নয় । তাই সাবধান !!
খুঁজে আনো নতুন ভারতের জন্য সুভাষ , নজরুল 
অথবা বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম ।



পরিবর্তন আসুক নব্য এক স্বাধীনতার হাত ধরে 

পরিবর্তন আসুক ঐক্য , চিন্তা আর মানুষের মননে ।



১২।।

আমি বিদ্রোহী 



কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।

বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ আমার প্রাণ হলেও , এই দেশ আমার মা নয় 
এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ , তবু , এই দেশ ধর্ম ভুলতে জানে না ।
এই দেশ আমার মা তাহলে কি করে হবে ?
এই দেশ আমার বোন কি করে হবে তাহলে ? 
এই দেশ কি তাহলে আমার প্রেমিকা হতে পারে ? 
পারে না । কারন আমার প্রেম শরীর নয় 
আত্মায় বিরাজ করে । 
তাহলে এই দেশ আমার হবে কি করে 
এই দেশের আমি হবো কি করে 
আর এটাই একটা অদ্ভুত বিষয় 
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ বেড়ে চলেছে অবিরাম 
সকলে মিলে একে ফাক করে দিচ্ছে প্রতিদিন 
তবু ধর্মের ত্রিশূলে কন্ডোম -- হত্যাযোগ্য অপরাধ 
দুঃশাসনের নজরে ।



অপরাধ নেবেন না , এই মিথ্যা আদর্শের দেশটাই আমার দেশ 

আর আমি বিদ্রোহী আমার এই দেশেরই বিরুদ্ধে ।



১৩।।

আমি বিদ্রোহী 



বিদ্রোহ শিখেছি তোমার থেকে 

তোমায় দেখে প্রতিবাদ জেনেছি 
শিখিয়েছ তুমি ' না ' বলতে এই সমাজে 
তোমাকে তাই, প্রেম , এই বিদ্রোহীর রক্ত সেলাম ।



 ভালোবাসার যে মন্ত্র বীজ 

পুতেছিলাম একদিন 
হৃদয়ের মাটিতে ,
আজ তা সম্পূর্ণ । 
সম্পূর্ণ , কারন তোমার পদ চিহ্ন 
আজ বুকের ওপর দাঁড়িয়ে 
রণ নেত্য করে কালি হয়ে , দুর্গা হয়ে 
বিদ্ধ করে  প্রত্যেক অসুচিময় স্বভাব ।



আমি প্রেম বিলিয়ে দিতে পারতাম না 

তোমার আদর না পেলে 
অন্যায় কে অন্যায় বলে ঘোষণা করতাম না 
জীবনে তুমি না এলে ।



আমি প্রেমিক হতে এসেছিলাম একদিন 

বিদ্রোহী হয়েছি ক্রমে ক্রমে 
কিন্তু খেয়াল করে দেখো কখনো 
সে বিদ্রোহে প্রেম ছিল সম্পূর্ণ 
সে বিদ্রোহে তুমিই ছিল আমার জগৎ জুড়ে ।



আমি আজ ক্লান্ত , 

বিদ্রোহের এ পথ এখনো অনেক বাকি 
আমার হাত শক্ত করো প্রিয়ে 
তোমাকেই তো দিশারী হতে হবে আমার । 



দিশারী , একজন পুরুষের ----

নারীদের জন্য , মানুষের জন্য বিদ্রোহী 
একজন সৈনিক পুরুষের ।



১৪।।



আমি বিদ্রোহী 




আমি বিদ্রোহের আগুন দেখেছিলাম 

একটা সুপ্ত ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির জীবন্ত রূপ দেখেছিলাম 
জীব খাদকের মুখে ।
অবলা , নিরীহ ওরা 
মুখে কথা নেই কোন 
তাদের রক্তে ধৌত হাসপাতালে 
আমি ভুলে ভরা চিকিৎসা দেখেছি প্রতিদিন ।
কসাই আজ ডাক্তারের সমনাম 
গানে গানে নচিকথায় শুনেছিলাম  
আজ দেখলাম , প্রাণদায়ি ভগবান 
দুধের পশু খুন করে , ইমেজ করছে ক্লিন ।
ওদেরও পরিবার আছে , বাড়িতে অপেক্ষা করে কেউ 
এমন ভাবনায় প্রয়োজন নেই ঘেউ ঘেউ  
তার চেয়ে মানুষ হয়েছি , পৃথিবী আমার 
এই রবে চলতে দাও শোরগোল ।
বিদ্রোহ মানে তো শুধুই মানুষের কথা বলা 
প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের জন্য পথে নামা  
দুই দলের তর্কাতর্কি , রাজনীতি ।
পশুদের জন্য ফাঁকা থাকুক রাজপথ 
পশু নিধন হোক শপথ 
যতই নিষ্পাপ হোক তার শৈশব ।
আমি বিদ্রোহী সেই মেকি মানুষদের জন্য 
যাদের কাছে ষোল শাবকের দাম শূন্য 
খুন হয়ে পড়ে থাকে চিকিৎসার মন্দিরে  
তারপর নিরুপায় দায় ছুড়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের নামে ।



বলছি কি মশাই ,

প্রশাসন , করপোরেশন এসব তো মানুষের সৃষ্টি 
মানবিকতা হারিয়েছি যখন আমরাই
তখন অন্যের গু ঘেঁটে কি লাভ বলুন  !!



১৫।।



বিপ্লব আসে না প্রেমহীনা 

ভালোবাসা বিদ্রোহ জাগায় 
নিজের বলে কাছে ডাকে নি যাকে 
তার জন্য কি জীবন দেওয়া যায় !!



আমি বিদ্রোহী হয়েছি 

তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে 
নারী যন্ত্রনা , দারিদ্র , মানবিকতা চিনিয়েছে ।



আমি ভালোবেসেছি তোমায় 

খাঁটি ভালোবাসা 
আর তাই বিপ্লবী পাগল মন বারবার 
বেঁচে উঠেছে বিদ্রোহী হয়ে প্রেমে -- মানুষের ।





১৬।।

আমি বিদ্রোহী  



অস্থির তরঙ্গের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মানুষ । কে যে ভালো আর কে যে কালো আমি জানি না । 

শুধু বুঝেছি যা ছিল অপরাধ , আজ সেটুকুও গ্রহনযোগ্য ।
হতেই পারে সবকিছু এই অপরাধের গোলকে । হতেই পারে কেউ আপন মিথ্যা বলেও 
তাদের ওই সামরাজ্যকতায় ।
গল্পের মধ্যে নায়ক কোনদিন ভিলেন হতেই পারে । হতেই পারে 
আছোলা বাঁশ গোপনে এসে ঢুকবে তোমার সর্বনেসে । 
হতেই পারে বন্ধু বেসে শত্রুর জয় জয়কার । হতেই পারো তুমি সিঁড়ি অসাধুর 
স্বর্গে যাওয়ার ।
এত কিছু হতে পারের মধ্যেও জিততে হবে , বলতে হবে বারবার । নামেতেই যার চৌর্য্য বৃত্তি শোভা পায় , 
রঙের তুলি তাদের কালো নির্লজ্জ মুখেও বাস্তব আর সত্যের ছাপ খুঁজে পেল - হতেও পারে 



নদীর বিপুল তরঙ্গে মরা কাঠ আর আবর্জনা ভেসে আসে আগে । সত্যের প্রদীপগুলো সমাধি নেয় 

তরঙ্গের গভীরে । তারপর একদিন দিন বদলায় ,,, আকাশের নক্ষত্ররা নির্বাক চোখে দেখে একটা কবিতা 



কবিতা 

অপরাজিত হয়ে স্রোতের উজান তরঙ্গের বিরূদ্ধে নৌকা বইছে -- কাগজে , কলমে 



এক কবি নয় , বিদ্রোহী হয়ে ।

১৭।।



আমি বিদ্রোহী 



( প্লেটো লিখেছিলেন , "আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের প্রবেশ নিষেধ।" )



এ রাষ্ট্র বিভীষিকাময় । এ রাষ্ট্র ভন্ড । 

ঢেউয়ের মত এখানে আছড়ে পড়ছে নিরীহ হাহাকার । 
এ রাষ্ট্রে দুটি মুখ - শোষক আর শোষিত 
এ রাষ্ট্রে মানুষের অধিকার আন্দোলনেই কেবল সীমাবদ্ধ ।
এ রাষ্ট্র হাতে বিশাল হানটার , গায়ে লোহার বর্ম 
চাবুক চলে এখানে নিশিদিন আর হাততালি পড়ে ঢাকতে 
ওদের আর্তনাদের শব্দ ।
লেলিন এখানে সুবিধালোভী , মার্ক্স ঘুমায় 
ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে 
সেফটি ভালভ লাগিয়ে দেশপ্রেমীরা , 
লুটছে এই সোনার দেশ ।
ফেডারেল কাস্ত্রো রাশিয়ায় , চে এখানে তামাশার পাত্র ।
মনে পড়ে এখন শুধু কলম তোমায় 
কান্না ঢাকতে বিনয়ের পায়ে গড় করে বলি ,
ফিরিয়ে আনো চাকাটা শেষবার , 
চালিয়ে দাও গলায় শেষবার 
তবে স্মৃতিমন্থন শুধু নয় এবার , চাকা ফিরে আসুক সুকান্তের কলমে শেষবারের মতো ।



কিন্তু , কোথায় সে চাকা । সে যে এখন রাজার রথের তলায় ।

হায় রে কবি ! কলম টুকু বাদ গেলোনা 
ওখানেও আজ তেল মারামারি আর রাষ্ট্রের বন্দনা 
আর কাগজে কাগজে মিথ্যে ভাষা 
দি পেন ইস মাইটার দ্যান দি সোর্ড ।



কবিদের মুখ আজ মুখোশময় , রাষ্ট্রের প্রচার যন্ত্র  তারা 

মোটা টাকা , শরীর , মদ আর মেয়েছেলের সুখ 
নেশায় নেশায় বিকিয়ে গেছে ওদের মানবিক রূপ ।
ওরাও আজ রঙ চেনে , দল বোঝে 
ওদের হাতেও ঝান্ডার নিশান ।
কিছু যারা সৎ ছিল , তারা পুরষ্কৃত হল একদিন 
জেল অথবা মৃত্যুর আলিঙ্গন ।



কৈশোরে আদর্শ রাষ্ট্র পড়েছিলাম অনেক 

বইয়ের ই পাতায় পাতায় , মার্ক্স অথবা লেনিনের কলমে 
আজ জীবনের যৌবনে দাঁড়িয়ে দেখি 
সব ঝুট হ্যায় , শুধু তাবেদারী জিন্দাবাদ লাজহীন শ্রমে ।
মনে পড়ছে সব , ফিরে আসছে চাকাটা 
গলার থেকে কিছুটা দূরে আর --
কলমটা পাশে রেখে মাটি দিলাম কবরে 
গলাটা কাটা পড়বার কয়েক সেকেন্ড আগে ।



আমি বিদ্রোহী । আমার রক্তের প্রতি কনায় লেখা এই ভাষা ।

একটা গোটা কবিতা । আমি বিদ্রোহী কবিতা ।






১৮।।



আমি বিদ্রোহী 



কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।

বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ আমার প্রাণ হলেও , এই দেশ আমার মা নয় 
এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ , তবু , এই দেশ ধর্ম ভুলতে জানে না ।
এই দেশ আমার মা তাহলে কি করে হবে ?
এই দেশ আমার বোন কি করে হবে তাহলে ? 
এই দেশ কি তাহলে আমার প্রেমিকা হতে পারে ? 
পারে না । কারন আমার প্রেম শরীর নয় 
আত্মায় বিরাজ করে । 
তাহলে এই দেশ আমার হবে কি করে 
এই দেশের আমি হবো কি করে 
আর এটাই একটা অদ্ভুত বিষয় 
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ বেড়ে চলেছে অবিরাম 
সকলে মিলে একে ফাক করে দিচ্ছে প্রতিদিন 
তবু ধর্মের ত্রিশূলে কন্ডোম -- হত্যাযোগ্য অপরাধ 
দুঃশাসনের নজরে ।



অপরাধ নেবেন না , এই মিথ্যা আদর্শের দেশটাই আমার দেশ 

আর আমি বিদ্রোহী আমার এই দেশেরই বিরুদ্ধে ।




১৯।।



আমি বিদ্রোহী



কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ গেরুয়া ?

কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সাদা ?
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সবুজ ? 
কে বলে মধ্যের চক্রটা নীল ?



জলের মাছটাকে আঁশ বটির ছোঁয়ায় লাল দেখাচ্ছে 



সিঁদুরের রঙ লাল , আমার মায়ের মাথার সিঁদুর 

বাবাকে আলাদা করা হয়েছিল বিয়ের রাতেই 



তখন থেকেই মায়ের রক্ত ঝরে পড়ে 

আঁচলের কোনায় ...
তবু মা আমাদের ভালোবেসে ভাত খেতে দেয় 
পায়েস দেয় , সিমুই দেয় , গল্প বলে 



নিজের ছেলে পৃথ্বীরাজের , নিজের ছেলে আকবরের , শাহজাহানের , ক্ষুদিরামের 



আঁশ বটিটা ধরতে গেলেই মানা করে -- রক্তের ভয় পায় 

দাঙ্গার রক্ত , ভাইয়ের রক্তের ।



জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে বুঝেছি 

জাতীয় পতাকার রঙ তিন নয় , চার নয় , পাঁচ নয় 



পুরো ছয় ---- 



পঞ্চমটা যদি দাঙ্গার হয় , শহীদের হয় 



ষষ্ঠটা ভালোবাসার , ভাতৃত্বের , মানবিকতার । 




আমি বিদ্রোহী । ঠিকই শুনেছেন আমি বিদ্রোহী । 

কিন্তু এই ছ ছ'টি রঙের বাইরে নয় ।




২০।।

আমার বিদ্রোহী চোখ দেখছে
দেশের মধ্যে জ্বলে ওঠে 
স্ফুলিঙ্গ ---- 
আমি দেখেছি 
সরকার গঠনের নামে গজিয়ে ওঠা 
লেনদেনি শৃঙ্গ --- 
আমি দেখেছি মূর্খ জনতা 
ফিরে আসে অসহায় 
ব্যালটের যুদ্ধ হেরে --- 
আমি দেখেছি চাঁদ এখানে 
কবিতা লেখে 
নিজের কলঙ্কের অমাবস্যার রাত্তিরে ।



বিপদের ঘন্টা বেজেছে 

ঢাক থেকে মাদলের কম্পনে 
মানুষ মরেছে মেকি আদর্শে পকেট ভরেনি , 
পেট এর রক্ত মুখ দিয়ে বয়ে গেছে শুধু ।
এখানে প্রতিদিন মিসেছে গঙ্গার স্রোত যমুনার জলে 
এখানে প্রতিদিন মরেছে হি-মু , দাঙ্গার কোলাহলে ।
মানুষের আয়ু ক্ষণস্থায়ী , নেতৃত্ব দীর্ঘজীবী 
কৃষকের দড়ি ঝুলছে গলায় , শ্রমিকের বৃত্তি ভিখারি প্রভু ।




আমার বিদ্রোহী বন্ধুগণ ,

আর সময় নেই ফ্যাসিবাদ , সাম্যবাদ , মার্কসবাদ বোঝাবার 
এখন বিদ্রোহী মন , গর্জে ওঠো ; 
নিজেকে করো আদর্শের চেয়ে বলিয়ান ।




২১।।



আমি বিদ্রোহী 




পথে পথে ঘুমিয়ে পড়ে সামন্ত্রদের লাশ 

আগুনের পরশমনির ছোঁয়ায় জেগে থাকে 
স্বপ্নভর্তি আকাশ ।



যৌনতা মারে না আর , বাঁচতে শেখায় অন্ধকার 

কলমের ঘোমটার আড়ালে , অধিকাংশেই 
ব্যবসায়ের সম্প্রচার ।



একদিকে নিজের সৃষ্টি তুলে দিতে পাঠকের হাতে 

লেখক খোঁজে প্রকৃতকে , গ্রহণের কালো প্রভাতে ।
অন্যদিকে ভয়াল বিষ , ফনায় তুলে নেয় যারা 
লেখক নামে ব্যবসা ছড়ায় ;
সম্মান ব্যাচে তাদের শিষে সাহিত্যের বসুন্ধরা ।



কেন তাদের মিথ্যা সম্মান প্রদান ? 

কেন তাদের এওয়ার্ডে বস্তা ভরা নাম ?
কেন পারে বলতে , কলঙ্ক তোমরা 
তোমাদের দুমুখো সৃষ্টি , ছুঁয়ে দেখাও পাপ ।



আমরা ধন্য , গর্বিত তার চেয়ে অনেক অনেক  

আজও বেনামি , ছোট লেখক - আমাদের সাথে জড়িয়ে ,
আজও পাঠকদের বন্ধু ভেবে নিই আপন করে
আজও কথা আর কালি থাকে , আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ।



আজও অপেক্ষা করি একটা সেলফি সবার সাথে 

আজও অপেক্ষা করি স্বাক্ষর নয় 
পরিচয় হবে আড্ডায় আড্ডায় ।
আর ওই বক তপস্বীর হোক সমনাম 
কোন সমরেশ অথবা দুঃখের কবিতা বা গান ।




আমি বিদ্রোহী । বিদ্রোহ করি কবিতায় । 

বিদ্রোহ করি সৃষ্টির অস্ত্র হাতে নিয়ে । 
কিন্তু আজ বিদ্রোহ নয় , বরং অনুশোচনা হোক 
আজ কবিতার মৃত্যু হয়েছে বইমেলার মাঠজুড়ে ।




২২।।

আমি বিদ্রোহী 



আমরা সমব্যাথি নই । আমাদের তো ব্যাথা লাগে নি কোথাও । 

যন্ত্রনা হয় নি আমাদের একফোঁটাও 
কোন রকম আঘাতে ।
আমরা যন্ত্রনা বলতে এখনো চিনি , 
কাঁটা তারে বল কুড়োতে গিয়ে কেটে যাওয়া 
আর ওরা কাঁটা তারের পাশে রাত জেগে থাকে 
বোমা কুড়াবে বলে ।
আমরা চাকরি করলে সুখ খুঁজি 
আর ওরা দুঃখ জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিদিন 
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে । 
একদিকে ভালোবাসার দিবসে আমাদের মধ্যে চলে 
প্রেম নিবেদন । 
অন্যদিকে ওরা ভালোবেসে জীবন দিয়ে চলে যায় ।
আমরা তাদের নখের আঘাতটুকু অনুভব করি কখনো 
সমব্যাথি হবো আমরা কি করে ? 



কিন্তু আমার বন্ধুরা 



আমরা মৃত্যু দেখেছি । রক্ত দেখেছি । সহ্যসীমা পার হয়ে গেছে । 

এবার তাই পথে নেমেছি । তান্ডব দেখবো বলে । 



আজ কতটুকু সুরক্ষিত আমরা ? কতটুকু সুরক্ষায় আমাদের সন্তান ? ভোট আসে , ভোট যায় 

প্রতিশ্রুতি হাজার বন্যা হয়ে ভাসিয়ে দিয়ে যায় 
রাজনৈতিক দল ।



কিন্তু বন্ধু , 

প্রতিশ্রুতি রাখতে দেখলাম না তো কাউকে । উল্টে আমাদের ভোজ্য টুকুও 
ওরা খেয়ে এলো জন্মদিনের আড়ালে । 



তাই বন্ধু , 

চলো আজ থেকে নিজেরা বদলে ফেলি নিজেকে 
ধর্ম , বর্ণ , জাত ভুলে 
চলো আহবান করি একটা সাম্রাজ্যের ।



রক্তবীজ হয়ে ওরা পথে নেমেছে 

আমরাও রক্তবীজ নিধন যজ্ঞে নিজেদের 
ছিন্নমস্তা গড়ে তুলি ।



বন্ধু , আর কথা নয় 

এবার অশুভ সব রক্তপানের সময় হল 
আমি বিদ্রোহী , তবে অন্যায়ের সাথে এ যুদ্ধে 
আমি হিংস্র , রক্তভোজী একটা জিভ ।



২৩।।

আমি বিদ্রোহী 




আমি ধর্মের প্রাচীরে অধর্মের গন্ধ পাই 

মানুষের মাঝখানে আর ঈশ্বর তাই খুঁজি নাই 
আমি পাই ঈশ্বর পাথরের সমাধি স্তূপে 
পাই না প্রকৃত মানুষ দাঁড়িয়ে ঈশ্বর রূপে ।
কে হিন্দু ? কে মুসলমান ? কে ইহুদি ? কে ক্রিস্টান 
জৈন , বৌদ্ধ , মহান 
আমি পাই না দেখতে ভিন্ন মাটির রং 
চাপিয়ে বুকে তার কাঁটাতার ।
আমি দেখতে ছুটি সিনেমা , ব্যবসায় মাখা 
দেখতে গিয়েও পাইনা দেখা , মুখোশের আড়ালে মানুষের
মুখ ঢেকে থাকা ।
আমি ভেদে নয়, একতার ধৃষ্টতা করি বারবার 
দেশ দ্রোহের তকমা মাথায় , করি পৃথিবী প্রতিদিন পারাপার 
আমি দেখেছি মানুষ , ঘুমিয়ে আনন্দে কাকের গান শুনে 
আমি দেখেছি মানুষ , ফেলে দেয় শিল্পীর আসল শিল্প 
নাক ব্যাকানো কেতাবি ঢঙে ।
আমি দেখেছি শ্রমিকের রক্তে রঙিন হয় 
সমাজের রেলগাড়ি 
মালিকের কালো হাত আমি দেখি করে 
গরিবের ঘাম চুরি 
তবু নীরব থাকি , চুপচাপ সয়ে যাই ভয়ে 
হয়তো হিন্দু বলবে , তুমি কাশভ সন্তান 
মুসলিম বলবে , তুমি আল্লাহর সন্তান নয় ।



গঙ্গা জানেন আজও বন্দি 

শিবের ওই বুড়ো এলকেশে 
লক্ষ্মী জানেন আজও বসে 
নারায়নের বৃদ্ধ চরণে ।
আর কতদিন স্বাধীন দেশে মানুষের 
স্বাধীনতা থাকবে হয়ে এক প্রহসন 
আর কতদিন ধরমের আড়ালে মানুষ 
সইবে জিহাদি অপমান ।
আর কতবার অবতার আসবে নেমে 
মৃত্যুর এই দেশে 
আর কতবার গাঁজা টেনে ঘুমাবে যৌবন 
বুড়ো শিবের নামের আবেশে ।



অনেক তো হল 

অনেক দিন তো পেরিয়ে গেল 
একবার তো পরিবর্তন হয়ে যাক ।
আর কতকাল সেই আল্লাহ , সেই ভগবান , সেই যীশু 
ভাগ্য বিধাতার পাবে প্রশ্রয় ।
এবার তরুণ রক্তে হোক কোন তরুণ অবতার 
না হয় আবার শুনবে তিন বিশ্ব 
যুদ্ধের হুংকার ।
লন্ড ভন্ড হয়ে যাক সৃষ্টি 
ক্ষোভের আগুনে 
সৃষ্টি হোক মঙ্গল , বর্তমান অমঙ্গল ভবনে ।




২৪।।

হরিণের মতো ঘর্মাক্ত পথ ছুটছে 
থেমে আসছে ঘড়ির কাঁটা 
ফ্যাকাসে আকাশ ঘাম মেখে বসে 
রোদের আলো ছুঁয়ে বৃষ্টি নামুক 
দুপুর জোছনায় ।



আজ চাই না আপনজন , 

সবাইকে পর করে পেড়িয়ে যায় আইন 
আমার পাশের বাড়ির গোয়াল ঘরে 
গরুগুলো ডাক ছাড়ে , গলা ছেড়ে 
ঘুম ভেঙে দেখছি, বুঝেছি ধীরে ধীরে 
ওরা ছাড়া এ দেশে আর কেউ ভারতীয় নয় ।



সাদা হিমালয়ের গলায় সাপ জড়িয়ে আছে 

ঠিক যেন সৈনিক , সকালের গেরুয়া আলোতে 
কফিন বাঁধা ।
কাল রাতে মৃত্যুর শীতল দুটো হাতে 
কেড়ে নিয়ে গেছিল ওদের সমস্ত পরিবার ।



আজ তারাও দাঁড়িয়ে নাগরিক পঞ্জিকায়

সরণির ধারে মিছিলে নেমেছে যেখানে হাজার হাজার 
উদ্বেগ , উৎকণ্ঠা ; ছিল যত বন বাদার 
এদো গলির কোনা খামচায় ।



আর কিছুক্ষন 

নতুন পাঠশালা সামনে দাঁড়িয়ে আমার 
জাতীয় পতাকার রঙ স্পষ্ট চোখে দেখলাম 
তিন নয় , চার নয় কেবল এক ।
এদেশের জন্য দেশভক্ত শহীদ হওয়া যায় 
দেশভক্তি আজ শুধুই প্রথম বর্ণের অনাচারজাত অধিকার ।



কি বিচিত্র রামায়ন না ! কি বিচিত্র ধর্মের নামে প্রহসন 

ঘুম ভাঙলো যখন , বুঝলাম তখন 
রাম নয় ; হনু ছাড়া এ দেশে আজ আর 
একটিও ভারতীয় নাই ।





২৫।।



প্রত্যেক ছুটির জন্য দায়ী তারা , যারা বিচারক তো হয়ে বসে আছে সিংহাসনে । কিন্তু বিচার করার জন্য কতজন , নিজের বুকে হাত রেখে বলুক , একবার পাতা উল্টেছে গুণীজনের । সবার তালিকা ইয়া লম্বা , হাতে গোনা কিছু নাম । আরে নাম বড় না সৃষ্টি , তুমিই বলো ভগবান । কতজন গুণী এ অভাগা দেশে কদর পায় , গেঁয়ো যোগিরা অভাগা এ দেশে ভিক কুড়িয়েই একদিন হারিয়ে যায় । লবিবাজ আজ কাদের বলি , আমরাই তো লবি বানাই । আরে , নাম বড় না সৃষ্টি , তুমিই বলো ভগবান ।

সবাই বলে , একে দেখো , ওর মতো হও । কতজন আজও ভেবে বলো তো সৃষ্টির রসে ডুবতে চাও ? তুলনা করে গেলে , সারাটাজীবন ; আরে , লবিবাজ তো তোমরাই বানাও 
কোন সাহসে বিচারক তুমি , লবিকে আজ ফাঁসির বাণী রোজ শোনাও । 



বলো , বলো , নিজেরাই । ভাবনা শুরু করো আজই । নাহলে  বিপদ ঘনিয়ে আসবে সবার ... সেদিন লবি নয় তোমরাই ঝুলবে , ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে ।