উৎসর্গ : প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
১।।
আমি বিদ্রোহী
আমি বিদ্রোহী ,
অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করি নি কোনদিন । মানুষ যেখানে বঞ্চিত , উপেক্ষিত ; যেখানে যখন লাঞ্ছিত এ যুগের নারায়ণ , আমি তখন কলম হাতে পথে নেমেছি
আক্রমণের ধারে বিদ্ধ করেছি দারিদ্র , অসহায়তা , অপরাধ । আমি জানি আজ মানুষের মনে লোভ অসীম আর তাই তো বারবার কবিতায় আমার ফুটে উঠেছে চাহিদা লোভহীন । আমি তোমাদের হতে চেয়েছি , জানিনা কতটা পেরেছি । তবু বারবার অহংকার করে বলেছি এক সীমাহীন পৃথিবীর গল্প ।
আমি বিদ্রোহী
জীবনে যা কিছু অশুভ , যা কিছু অপ্রিয় আমি বারবার , প্রতিবার তারই বিরুদ্ধে লিখে গেছি । কলম , আমার কাছে একটি অস্ত্র এবং সেই অস্ত্রের ছোঁয়ায় লাল ওই আকাশের লালিমাটিকে মুছে দিয়ে নীলাকার রূপে আবার রঙ ভরেছি ।
আমি বিদ্রোহী ,
বন্ধুগন , আমি বিদ্রোহ করেছি এই সমাজের গলদের বিরুদ্ধে , সমাজ গড়বো বলে । তবে , নেতা হয়ে নয় , একজন সামন্ত হয়েই আমার আগ্রাসন । কবিতা কে ভালোবেসে , ঈশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছি নীরবে । আমি কবি হতে আসিনি , কবিতা বিলিয়ে দিতে এসেছিলাম । প্রেমিক হতে আসিনি , প্রেমিকার জীবনের অংশ হতে এসেছিলাম । কিন্তু এই পৃথিবী পাঠক দিলো না , প্রেমিকা আশ্রয় দিল না মনে । এতটুকু অনুরোধ কেউ প্রতিবাদী নেতা বানিয়ে দেবেন না ।
ভালো থাকুক নক্ষত্রপুঞ্জ , ভালো থাকুক নতুন গ্যালাক্সি
শুধু দয়া করো পৃথিবী ,আমার নিঃশব্দ সৃষ্টিগুলো
নীরব রেখো , আমি নীরব হয়ে যাবার পরে
২।।
আমি বিদ্রোহী
বিদ্রোহ করেছি নিজের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করেছি নিজের বস্তা পচা আদর্শের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করেছি এমন হাজার হাজার
নীতির বিরুদ্ধে যা এতদিন ধরে জন্ম দিয়েছে
এক পঙ্গু সমাজ , পঙ্গু সংস্কৃতির ।
আমি বিদ্রোহী
হাজার হাজার অভিশাপ তাই আমার মাথায়
সিঁদুর হয়ে জড়িয়ে থাকে
সত্যি , সমাজের কাছে বরাবরই দায়
অসহায় করে দেয় যে অসহ্য দাওয়াই ।
বন্ধুগন , আমি জানি
এই সমাজ আমাকে নাম দেবে না ,
সম্মান দেবে না
কোন মনে আমি আশ্রয় পাবো না
হৃদয়ের ভালোবাসা পাবো না
সবাই আঙ্গুল তুলবে আর চিৎকার করে
আমায় পাগলের শ্রেণীতে স্থান দেবে ---
কারন
তারাও ভীত আমার এই সামন্তী আগ্রাসনে ।
তাই আমি বিদ্রোহী , কলম আমার অস্ত্র
স্বপ্ন ভালোবাসাময় সংসার ।
আমি বিদ্রোহী ছিলাম না । কিন্তু এই সমাজ আমায় হত্যা করেছে বারবার । ভালোবাসায় মুখ লুকিয়েছিলাম ,
ভালোবাসা আমায় পরিত্যাগ করেছে ।
অনেক দুঃখ সয়ে গেছি , আর তারপর অবশেষে
বিদ্রোহ করেছি ।
বন্ধুগন ,
আমি আগেও বলেছি
আমি প্রেমিক হতে এসেছিলাম , কিন্তু
এই নির্দয় সমাজ
আমায় প্রেম দেয়নি । তাই কলমের ধারে
রক্তকনা পান করছি আমি ।
চাইলে আমায় শুলে দিও , অথবা
হত্যা করো এই সময়ে ।
আমি বদলের স্বাদ চেখেছি ,
নিজেকে বদলের ধাঁচে মেলে ধরেছি
তারপর
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ....
ফিরে আসি অথবা নাই আসি
মনে রেখো
আমি বিদ্রোহী নই
ভালোবেসে তাকে আমি অপরাধী একজন ।
৩।।
আমি বিদ্রোহী
বিদ্রোহ করেছি সমাজের সেই জীর্ণ পচা আদর্শের বিরুদ্ধে , যেখানে একজন নারীকে ওরা বিদায়ের নামে ঠেলে ফেলে দেয় নোংরা জলের গভীরে । আচ্ছা , এই নারী মূর্তি ঘিরে কাল কত উন্মাদনা ছিল । কত নিষ্ঠা ছিল । কত আনন্দ ছিল । কারন , এই নারী একটি লাল সুতোর গেরোয় এতদিন বন্দি ছিল তোমাদের প্রাসাদে ।
বিদায়ের দিনে গেরো গেছে ছিঁড়ে , এবার তার মুক্তির সময় , স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে সে । তাই সমাজ তাকে তুলে ফেলে দিল গঙ্গার গভীরে ।
আমি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি ।
নারী মানে আমার চোখে দেবী নয় শুধু , নারী মানে আমার চোখে মা , কন্যা , বোন , স্ত্রী , প্রেমিকা । আমার কাছে তাদের সম্পর্ক ভালোবাসার আর এই ভালোবাসার টানে আমি হেঁটে চলেছি অনন্ত পথ এই জীবনে । ভালোবাসা আমায় ত্যাগ করেনি , আমি বুঝেছি । শুধু একজনকে ঘিরে এ সংসার নয় । এই দেশ, এই সমাজ আমার চোখে এক একজন প্রেমিকা ।
আজ জলাশয়ের ওপর আলো পড়েছে অনেক । সেই আলো সমাজকে কবে আলোকিত করবে ঈশ্বর জানেন ।
কবে প্রেম ধরা দেবে মানুষে মানুষে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঈশ্বর জানেন ।
আমি বিদ্রোহ করেছি । সেই প্রেম প্রতিষ্ঠার জন্য আমি বারবার বিদ্রোহ করেছি ।
তাই আমি বিদ্রোহী । প্রেমিক বিদ্রোহী ।
৪।।
আমি বিদ্রোহী ।
বিদ্রোহ করতে আমি রণে নেমেছি । দারিদ্র দূরীকরণের নামে
আমি দরিদ্রকে মিটে যেতে দেখেছি । আমি দেখেছি স্তন কাটা মায়েদের কান্না ,
আমি দেখেছি আড়াই থেকে সত্তরের ধর্ষণ হওয়া শত শত কন্যা ।
আমি দেখেছি উর্ধিধারীর দল , মিশে গেছে ঘুষের রঙে
আমি দেখেছি এসি ঘরে জামাই আদর , চালায় নেতারা নিজেদের ওই কেতাবি ঢঙে ।
আমার কলম নিস্তেজ হয়েছে এ হিম শীতলতায় ।
তবু গর্জে উঠেছে
যেখানে পেয়েছে রক্ত গরম করা অন্যায় আগুনের উত্তাপ ।
বন্ধুগন ,
তোমরা আমার বীর সৈন্যদল । তোমাদের একহাতে মনুষত্ব
আর
অন্যহাতে ধ্বংসরূপে ধর্মের অবস্থান ।
একহাতে তোমাদের প্রেম , ভালোবাসা
আর
অন্যদিকে হিংসার দাবানল ।
একদিকে তোমরা প্রেমিক শিশু
অন্যদিকে নৃশংস আদিম পশু ।
যেদিন এই বাঁশির সুর থেমে যাবে , সূর্য আমার পশ্চিমে
ঘুমিয়ে পড়বে
সেদিন নবীর হাতে আমি কৃষ্ণের প্রেমের বাঁশি দেখতে চাই!
সেদিন কৃষ্ণের কণ্ঠে আমি মোহাম্মাদের বাণী শুনতে চাই ।
মানবতার ধর্মের ডাকে , একসাথে লড়তে চাই শুধু।
সেদিন কবরে ঘুমিয়ে অথবা চিতায় শুয়ে
আমি নিজে নিজেকে বলতে পারবো
আমি বিদ্রোহী নই । একজন সফল প্রেমিক ।
সেদিন নিজে নিজেকে একটা উপহার ছেড়ে যেতে পারবো
আমার ভালোবাসার জন্য , একটা সমাজ ।
৫।।
আমি বিদ্রোহী ।
ধর্মের নামে গোঁড়ামি যত দেখেছি
ততই আমি দৃঢ় কণ্ঠে রুদ্ধ কলমের খোঁচায়
প্রতিবাদ করেছি
বলেছি সত্য , গেয়ে উঠেছি মানবের জয়গান ।
কিছু নিচ পাষন্ড আজও মতি ভুলে
মানুষকে উপেক্ষা করে
ধর্মের নামে বিভেদের খেলা খেলে ।
আমি বিদ্রোহ করেছি
সেই ধর্ম , সেই চির প্রচলিত জীর্ণ
পন্ডিত থেকে পুরোহিত ,
হিন্দু , মুসলমান , জৈন অথবা ক্রিস্টান
বেদের শ্লোক থেকে আয়াত - এ - কুরআন ।
আমি বিদ্রোহী ।
বিদ্রোহ আমার রক্তে , যেখানে উপেক্ষিত মানুষ
বিদ্রোহ আমার শর্তে , চাই মানুষের দেবত্বের অধিকার ।
আমি নানক পড়েছি , আমি পড়েছি বেদ কোরান বাইবেল
অথবা ত্রিপিটক
আমি বৌদ্ধ শুনেছি , শুনেছি কবিরের দোহা
কিংবা
লালন শাহের মানবিকতার গান ।
আমি ভক্তি দিয়ে সব মেনেছি
যুক্তি দিয়ে সব পুঁথি ঘেঁটেছি
গেছি মক্কা থেকে লুম্বিনী নগরে
কৈলাশ থেকে জেরুজালেম
আর তারপর
সকলের জন্য লিখতে বসেছে
বিদ্রোহী মন আমার
মানবিকতার গূঢ় তত্ব ---
" সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপরে নাই "
৬।।
আমি বিদ্রোহী ।
মন্দিরের বন্ধ ঘরে যে লক্ষ্মী ধর্ষণ হল কোজাগরীতে
মসজিদের দালান জুড়ে যে পথিক ঝিমিয়ে ঘুমায়
ক্ষুধায় মরে
আমি তাদের জন্য ভগবানের ঠিকানা খুঁজেছি
মানুষের দরবারে
নেমে গেছি পথের ধুলায় , মানুষের গান বুকে জড়িয়ে
বলেছি দৃঢ় কণ্ঠে ভাঙতে ওই পাথরের ইমারত
যেখানে মূর্তি আছে সাজানো সারি সারি
যেখানে কনায় কনায় ভরে আছে কুরানের পবিত্র বাণী
আমি বিদ্রোহী
ধর্মের জন্য বিদ্রোহ করেছি বারবার
আমার লক্ষ্য শুধু একটাই ধর্ম প্রতিষ্ঠার
আমি বিদ্রোহী
জ্বলে উঠবো বারবার
করেছি আর করবো বিদ্রোহ মানুষের জন্য
হিন্দু , মুসলিম , ক্রিস্টান , জৈন , বৌদ্ধ , শিখ , পারসিক সব
নিপাত যাক
পৃথিবী জুড়ে শান্তি নামুক মানবিকতায় ।
৭।।
আমি বিদ্রোহী ।
রক্তের দাম আজ ঘামের থেকেও সস্তা
জীবিত মানুষ আজ মৃত , অসহায় মূর্তির থেকেও অসহায়
মানুষ আজ মানুষ মারে এক নাদেখা , অচেনা অদৃশ্যের লোভে
আর কাড়ি কাড়ি কড়ি গলে যায়
ওদের সেবায় ।
আমি বলেছি তাদের আহাম্মক
যারা সেই অচেনা অশরীরির জন্য
দূরে সরিয়ে দেয় জীবিত মানব প্রীতি ।
আমি তাদের সম্মান জানাতে অস্বীকার করিনি
শুধু বলেছি তাদের নেশা , তাদের বদ অভ্যাসগুলো
দূরে সরিয়ে রাখতে
আমি আরও বলেছি তাদের জন্য কোটি টাকার বিছানা না সাজিয়ে
অভুক্ত অসহায় মানুষের জন্য লক্ষ টাকার পান্তা থালা
জোগাড় করা খুব কী কষ্টের কাজ !
এতেই তারা ক্ষেপেছে ।
বলছে আমি মহাপাপি । ঈশ্বর আল্লাহকে অস্বীকার করেছি ।
আর আমি বলছি
হ্যাঁ তাদের পবিত্র বাণী মেনেই আমি আজ নাস্তিক হয়েছি ।
ঈশ্বর খুঁজতে গেছি এই সংসারে মানুষের মধ্যে
কোন উপাসনালয়ে , ধর্মগ্রন্থে অথবা
তাদের মিথ্যা অনুকরণকারীদের মধ্যে নয় ।
হ্যাঁ , আমি বিদ্রোহী
একজন মানব প্রেমী বিদ্রোহী বীর ।
৮।।
বৃদ্ধ বলে যে সমাজ পুরাতনকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়
আমার কলম বিদ্রোহী হয়ে সেই সমাজেরই
ধ্বংস দেখতে চায় ।
আমি বিদ্রোহ করি মানুষের জন্য
বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য
কিন্তু যখন দেখি বর্তমানের নামে ব্রাত্য অতীত
তখন বিদ্রোহী কলম
স্বজন ছেড়ে সেই অসহায় কাঁপাহাতের আঙ্গুল ধরতে
ছুটে যায় ।
আমরা মানুষ ।
তবু কেন বেহুশ হয়ে পড়ি বারবার ! কেন দুদন্ড ওদের জন্য
বাঁচতে পারি না
যারা এত বছর আমাদের জন্য বেঁচে ছিল বারবার ।
আপনারা জানেন ,
আমি হত্যা , ধ্বংস , ভাঙ্গনের জন্য নামি নি
আমি প্রেমিক সন্যাসী
প্রেম বিলিয়ে দিতে এসেছি
কিন্তু
হে আমার যুবক সৈনিক
এ প্রেম তো কেবল তোমাদের জন্য নয় ।
এ প্রেমে তাদেরও পূর্ণ অধিকার আছে
যারা বয়সের ভার সহ্য করেও
আজও তোমাদের জন্য দুয়া মাঙ্গে
তবু আমি দেখছি
তারা শোষিত হচ্ছে এই সমাজে বারবার
তোমাদের এই দায়িত্বভরা দুহাতে
আজ আমি নয় ,
আমার কলম বিদ্রোহী
এই তোমাদেরই বিরুদ্ধে -- আগামীর যুব সমাজ ।
৯।।
আমি বিদ্রোহী
কিছু নাদেখা স্বপ্ন হয়ে ফুটিয়ে তুলতে চাই ।
মুখপোড়া সব অন্ধ ভক্তের মধ্যে মুখখুলে
একবার একটা প্রশ্ন করতে চাই ।
তাদের বিশ্বাসের কালো বন্ধনের মধ্যে দিয়ে
দেখতে চাই কিছু যুক্তির শক্তি ।
আমি বিদ্রোহী সেজেছি তাই
এই ভক্তি ব্যাপী পৃথিবীতে যুক্তির শক্তি
একবার দেখিয়ে যাবো ভাই ।
বিনা কারণে যখন সংসারে , একটা পাতাও নড়ে না
বিনা ছন্দে যখন কবিতায় , মেঘেরা সব গরুর মতো চড়ে না
তখন
আমি বিদ্রোহ করি
আমাদের পাথরঠাসা সেই হৃদয়ের ভক্তি সাগরে
তোমাদের সংসার যখন ঘুষখোরে ঠেসে আছে
তখন ঈশ্বর কি একটা দানাও পক্ষপাত করবে না !
যখন তোমাদের হিসাবে দুয়ে দুয়ে ছয় হতে পারে
তখন তিনি কেন তেলে জলে প্রদীপ জ্বালাবেন না !
আমি দেখেছি প্রচুর ভিড়
ওই শালা মৃতদের ঘিরে --
আমি দেখেছি মানুষ বিকিয়ে দেয় নিজেকে
ওই শালা ভন্ডদের পায়ের তলে ---
আমি প্রেমিক হয়ে ব্যর্থ হয়েছি
তাই প্রেমের পথ গড়তে পথে নেমেছিলাম
এই ভক্তি রুপি পাথর এখন সামনে আমার
তাই বিদ্রোহী হয়েছি
শুধু ভক্তিটুকু যুক্তিতে পরিবর্তন করবো বলে ।
১০।।
বিদ্রোহ মানে , তিনটে অক্ষর নয়
বিদ্রোহ মানে , শুধু প্রতিবাদ নয়
বিদ্রোহ মানে , একটা ভাবনা মানুষের জন্য
বিদ্রোহ মানে , ভালোবেসে পাশে দাঁড়ানো
একটু ভালোবাসার জন্য ।
আমি বিদ্রোহী
মানুষের কথা বলে যাই গানে গানে তাই
আমি বিদ্রোহী
মানুষের কথা লিখে যাই কলমের ভাষায়
কোথাও দেখি মানুষের শরীর জুড়ে
অন্যায়ের কালসিটে
কোথাও দেখি মানুষের মনের গভীরে
ভাঙ্গনের রক্ত ছিটে
আমি নীরব হয়ে দেখেছিলাম ধর্মের ছলনা
নারী হয়ে ওঠে কেমন করে পুরুষের খেলনা
আমি বিদ্রোহী তাই কলমের হাত ধরে
সচেতন করে যাই চিরকাল ভালোবাসার অক্ষরে ।
১১।।
চলুন আজ মানুষের বিরুদ্ধে পথে নামা যাক ।
মানুষ মানে আমরা সবাই , মান আর হুসে ভরা
প্রত্যেকেই ।
আমাদের আচরণ আজ উন্নতির কেনা গোলাম
বিজ্ঞানের দাস হয়ে আজ আমরা সুখী
স্বার্থপর হয়ে উঠেছি আমরা প্রত্যেকে -- এ যুগের জনগন ।
মোবাইলের রেডিয়েশন হোক আর পারমানবিক বিস্ফোরণ
আজ আমরা সময়কে মুঠোয় বাঁধতে চেয়েছি
বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা সবাই হিতের বিপরীতে হেঁটে
হানির মন্ত্র মেনে চলেছি ।
আজ বিদ্রোহী এই মানুষটিও লজ্জিত
কারন সে নিজেও এই পথেরই পথিক
পৃথিবীকে নিজের বাপের মনে করে
আমিও তো সবার মতোই স্বার্থের রঙে রঙিন ।
আমি বিদ্রোহী নই আজ
একজন কলঙ্ক , হত্যাকারী পাষন্ড নিচ
সবারই মত
ধিক্কার তাই আমাকেও , কলম আমার জানাতে এসেছে
চিরকালের মত ।
যেখানে অপরাধই শত অংশে ভরা
সেখানে শাস্তি দেবে কে ?
হে প্রভু , এই সামন্তের অনুরোধ শুনুন
আমাদের অতীত ফিরিয়ে দিন
আগেকার মতন ।
১২।।
সাবধান !!
পদে পদে অচলায়তন । ডিগ্রিহীনরা আজ মসনদে আর
ডিগ্রিধারী সব জুতোর তলায় ভুপিষ্ট ।
এ গল্প তোমার গল্প , আমার গল্প ; এই দেশের প্রত্যেকের গল্প
এ গল্প সাম্রাজ্যের পর সাম্রাজ্যের গল্প
কবরের তলায় ঘুমিয়ে থাকা শোষিতদের গল্প
এ গল্প যুগ যুগান্তরের বার্তা বয়ে আনে মিষ্টতার মধ্যে ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখো ; পরাধীন মন্দিরে
পরাধীন হিন্দু থেকে মুসলমান ---
আমাদের ঔকাদ ছিল কতটুকু জনাব সেদিন
জুতোর তলায় চামড়ার মাঝে আটকে পড়া পেরেকের মতো ।
তারপর পাল্টে গেল পাতাটা ; স্বাধীনতার মুখোস পড়লাম
সেদিন ব্রিটিশ এর রাজদণ্ড মিশেছিল ধুলায়
কিন্তু স্বাধীন আমরা কোথায় হলাম ।
জয় জয় মহারাজ , তুমি ঈশ্বর হয়ে বসলে এসে মসনদে
গণতন্ত্রের নাম ধরে আসন লুটে গেছো সত্তর বছর ধরে
আমরা সহ্য করেছিলাম সব ---
তবে আর নয় । তাই সাবধান !!
খুঁজে আনো নতুন ভারতের জন্য সুভাষ , নজরুল
অথবা বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম ।
পরিবর্তন আসুক নব্য এক স্বাধীনতার হাত ধরে
পরিবর্তন আসুক ঐক্য , চিন্তা আর মানুষের মননে ।
১২।।
আমি বিদ্রোহী
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ আমার প্রাণ হলেও , এই দেশ আমার মা নয়
এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ , তবু , এই দেশ ধর্ম ভুলতে জানে না ।
এই দেশ আমার মা তাহলে কি করে হবে ?
এই দেশ আমার বোন কি করে হবে তাহলে ?
এই দেশ কি তাহলে আমার প্রেমিকা হতে পারে ?
পারে না । কারন আমার প্রেম শরীর নয়
আত্মায় বিরাজ করে ।
তাহলে এই দেশ আমার হবে কি করে
এই দেশের আমি হবো কি করে
আর এটাই একটা অদ্ভুত বিষয়
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ বেড়ে চলেছে অবিরাম
সকলে মিলে একে ফাক করে দিচ্ছে প্রতিদিন
তবু ধর্মের ত্রিশূলে কন্ডোম -- হত্যাযোগ্য অপরাধ
দুঃশাসনের নজরে ।
অপরাধ নেবেন না , এই মিথ্যা আদর্শের দেশটাই আমার দেশ
আর আমি বিদ্রোহী আমার এই দেশেরই বিরুদ্ধে ।
১৩।।
আমি বিদ্রোহী
বিদ্রোহ শিখেছি তোমার থেকে
তোমায় দেখে প্রতিবাদ জেনেছি
শিখিয়েছ তুমি ' না ' বলতে এই সমাজে
তোমাকে তাই, প্রেম , এই বিদ্রোহীর রক্ত সেলাম ।
ভালোবাসার যে মন্ত্র বীজ
পুতেছিলাম একদিন
হৃদয়ের মাটিতে ,
আজ তা সম্পূর্ণ ।
সম্পূর্ণ , কারন তোমার পদ চিহ্ন
আজ বুকের ওপর দাঁড়িয়ে
রণ নেত্য করে কালি হয়ে , দুর্গা হয়ে
বিদ্ধ করে প্রত্যেক অসুচিময় স্বভাব ।
আমি প্রেম বিলিয়ে দিতে পারতাম না
তোমার আদর না পেলে
অন্যায় কে অন্যায় বলে ঘোষণা করতাম না
জীবনে তুমি না এলে ।
আমি প্রেমিক হতে এসেছিলাম একদিন
বিদ্রোহী হয়েছি ক্রমে ক্রমে
কিন্তু খেয়াল করে দেখো কখনো
সে বিদ্রোহে প্রেম ছিল সম্পূর্ণ
সে বিদ্রোহে তুমিই ছিল আমার জগৎ জুড়ে ।
আমি আজ ক্লান্ত ,
বিদ্রোহের এ পথ এখনো অনেক বাকি
আমার হাত শক্ত করো প্রিয়ে
তোমাকেই তো দিশারী হতে হবে আমার ।
দিশারী , একজন পুরুষের ----
নারীদের জন্য , মানুষের জন্য বিদ্রোহী
একজন সৈনিক পুরুষের ।
১৪।।
আমি বিদ্রোহী
আমি বিদ্রোহের আগুন দেখেছিলাম
একটা সুপ্ত ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির জীবন্ত রূপ দেখেছিলাম
জীব খাদকের মুখে ।
অবলা , নিরীহ ওরা
মুখে কথা নেই কোন
তাদের রক্তে ধৌত হাসপাতালে
আমি ভুলে ভরা চিকিৎসা দেখেছি প্রতিদিন ।
কসাই আজ ডাক্তারের সমনাম
গানে গানে নচিকথায় শুনেছিলাম
আজ দেখলাম , প্রাণদায়ি ভগবান
দুধের পশু খুন করে , ইমেজ করছে ক্লিন ।
ওদেরও পরিবার আছে , বাড়িতে অপেক্ষা করে কেউ
এমন ভাবনায় প্রয়োজন নেই ঘেউ ঘেউ
তার চেয়ে মানুষ হয়েছি , পৃথিবী আমার
এই রবে চলতে দাও শোরগোল ।
বিদ্রোহ মানে তো শুধুই মানুষের কথা বলা
প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের জন্য পথে নামা
দুই দলের তর্কাতর্কি , রাজনীতি ।
পশুদের জন্য ফাঁকা থাকুক রাজপথ
পশু নিধন হোক শপথ
যতই নিষ্পাপ হোক তার শৈশব ।
আমি বিদ্রোহী সেই মেকি মানুষদের জন্য
যাদের কাছে ষোল শাবকের দাম শূন্য
খুন হয়ে পড়ে থাকে চিকিৎসার মন্দিরে
তারপর নিরুপায় দায় ছুড়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের নামে ।
বলছি কি মশাই ,
প্রশাসন , করপোরেশন এসব তো মানুষের সৃষ্টি
মানবিকতা হারিয়েছি যখন আমরাই
তখন অন্যের গু ঘেঁটে কি লাভ বলুন !!
১৫।।
বিপ্লব আসে না প্রেমহীনা
ভালোবাসা বিদ্রোহ জাগায়
নিজের বলে কাছে ডাকে নি যাকে
তার জন্য কি জীবন দেওয়া যায় !!
আমি বিদ্রোহী হয়েছি
তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে
নারী যন্ত্রনা , দারিদ্র , মানবিকতা চিনিয়েছে ।
আমি ভালোবেসেছি তোমায়
খাঁটি ভালোবাসা
আর তাই বিপ্লবী পাগল মন বারবার
বেঁচে উঠেছে বিদ্রোহী হয়ে প্রেমে -- মানুষের ।
১৬।।
আমি বিদ্রোহী
অস্থির তরঙ্গের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মানুষ । কে যে ভালো আর কে যে কালো আমি জানি না ।
শুধু বুঝেছি যা ছিল অপরাধ , আজ সেটুকুও গ্রহনযোগ্য ।
হতেই পারে সবকিছু এই অপরাধের গোলকে । হতেই পারে কেউ আপন মিথ্যা বলেও
তাদের ওই সামরাজ্যকতায় ।
গল্পের মধ্যে নায়ক কোনদিন ভিলেন হতেই পারে । হতেই পারে
আছোলা বাঁশ গোপনে এসে ঢুকবে তোমার সর্বনেসে ।
হতেই পারে বন্ধু বেসে শত্রুর জয় জয়কার । হতেই পারো তুমি সিঁড়ি অসাধুর
স্বর্গে যাওয়ার ।
এত কিছু হতে পারের মধ্যেও জিততে হবে , বলতে হবে বারবার । নামেতেই যার চৌর্য্য বৃত্তি শোভা পায় ,
রঙের তুলি তাদের কালো নির্লজ্জ মুখেও বাস্তব আর সত্যের ছাপ খুঁজে পেল - হতেও পারে
নদীর বিপুল তরঙ্গে মরা কাঠ আর আবর্জনা ভেসে আসে আগে । সত্যের প্রদীপগুলো সমাধি নেয়
তরঙ্গের গভীরে । তারপর একদিন দিন বদলায় ,,, আকাশের নক্ষত্ররা নির্বাক চোখে দেখে একটা কবিতা
কবিতা
অপরাজিত হয়ে স্রোতের উজান তরঙ্গের বিরূদ্ধে নৌকা বইছে -- কাগজে , কলমে
এক কবি নয় , বিদ্রোহী হয়ে ।
১৭।।
আমি বিদ্রোহী
( প্লেটো লিখেছিলেন , "আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের প্রবেশ নিষেধ।" )
এ রাষ্ট্র বিভীষিকাময় । এ রাষ্ট্র ভন্ড ।
ঢেউয়ের মত এখানে আছড়ে পড়ছে নিরীহ হাহাকার ।
এ রাষ্ট্রে দুটি মুখ - শোষক আর শোষিত
এ রাষ্ট্রে মানুষের অধিকার আন্দোলনেই কেবল সীমাবদ্ধ ।
এ রাষ্ট্র হাতে বিশাল হানটার , গায়ে লোহার বর্ম
চাবুক চলে এখানে নিশিদিন আর হাততালি পড়ে ঢাকতে
ওদের আর্তনাদের শব্দ ।
লেলিন এখানে সুবিধালোভী , মার্ক্স ঘুমায়
ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে
সেফটি ভালভ লাগিয়ে দেশপ্রেমীরা ,
লুটছে এই সোনার দেশ ।
ফেডারেল কাস্ত্রো রাশিয়ায় , চে এখানে তামাশার পাত্র ।
মনে পড়ে এখন শুধু কলম তোমায়
কান্না ঢাকতে বিনয়ের পায়ে গড় করে বলি ,
ফিরিয়ে আনো চাকাটা শেষবার ,
চালিয়ে দাও গলায় শেষবার
তবে স্মৃতিমন্থন শুধু নয় এবার , চাকা ফিরে আসুক সুকান্তের কলমে শেষবারের মতো ।
কিন্তু , কোথায় সে চাকা । সে যে এখন রাজার রথের তলায় ।
হায় রে কবি ! কলম টুকু বাদ গেলোনা
ওখানেও আজ তেল মারামারি আর রাষ্ট্রের বন্দনা
আর কাগজে কাগজে মিথ্যে ভাষা
দি পেন ইস মাইটার দ্যান দি সোর্ড ।
কবিদের মুখ আজ মুখোশময় , রাষ্ট্রের প্রচার যন্ত্র তারা
মোটা টাকা , শরীর , মদ আর মেয়েছেলের সুখ
নেশায় নেশায় বিকিয়ে গেছে ওদের মানবিক রূপ ।
ওরাও আজ রঙ চেনে , দল বোঝে
ওদের হাতেও ঝান্ডার নিশান ।
কিছু যারা সৎ ছিল , তারা পুরষ্কৃত হল একদিন
জেল অথবা মৃত্যুর আলিঙ্গন ।
কৈশোরে আদর্শ রাষ্ট্র পড়েছিলাম অনেক
বইয়ের ই পাতায় পাতায় , মার্ক্স অথবা লেনিনের কলমে
আজ জীবনের যৌবনে দাঁড়িয়ে দেখি
সব ঝুট হ্যায় , শুধু তাবেদারী জিন্দাবাদ লাজহীন শ্রমে ।
মনে পড়ছে সব , ফিরে আসছে চাকাটা
গলার থেকে কিছুটা দূরে আর --
কলমটা পাশে রেখে মাটি দিলাম কবরে
গলাটা কাটা পড়বার কয়েক সেকেন্ড আগে ।
আমি বিদ্রোহী । আমার রক্তের প্রতি কনায় লেখা এই ভাষা ।
একটা গোটা কবিতা । আমি বিদ্রোহী কবিতা ।
১৮।।
আমি বিদ্রোহী
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ আমার প্রাণ হলেও , এই দেশ আমার মা নয়
এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ , তবু , এই দেশ ধর্ম ভুলতে জানে না ।
এই দেশ আমার মা তাহলে কি করে হবে ?
এই দেশ আমার বোন কি করে হবে তাহলে ?
এই দেশ কি তাহলে আমার প্রেমিকা হতে পারে ?
পারে না । কারন আমার প্রেম শরীর নয়
আত্মায় বিরাজ করে ।
তাহলে এই দেশ আমার হবে কি করে
এই দেশের আমি হবো কি করে
আর এটাই একটা অদ্ভুত বিষয়
কঠিন হলেও , হ্যাঁ ; এই মৃত্যুপুরী আমার দেশ ।
বেদনাদায়ক হলেও , হ্যাঁ ; এই হত্যানগরী আমার দেশ ।
এই দেশ বেড়ে চলেছে অবিরাম
সকলে মিলে একে ফাক করে দিচ্ছে প্রতিদিন
তবু ধর্মের ত্রিশূলে কন্ডোম -- হত্যাযোগ্য অপরাধ
দুঃশাসনের নজরে ।
অপরাধ নেবেন না , এই মিথ্যা আদর্শের দেশটাই আমার দেশ
আর আমি বিদ্রোহী আমার এই দেশেরই বিরুদ্ধে ।
১৯।।
আমি বিদ্রোহী
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ গেরুয়া ?
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সাদা ?
কে বলে জাতীয় পতাকার রঙ সবুজ ?
কে বলে মধ্যের চক্রটা নীল ?
জলের মাছটাকে আঁশ বটির ছোঁয়ায় লাল দেখাচ্ছে
সিঁদুরের রঙ লাল , আমার মায়ের মাথার সিঁদুর
বাবাকে আলাদা করা হয়েছিল বিয়ের রাতেই
তখন থেকেই মায়ের রক্ত ঝরে পড়ে
আঁচলের কোনায় ...
তবু মা আমাদের ভালোবেসে ভাত খেতে দেয়
পায়েস দেয় , সিমুই দেয় , গল্প বলে
নিজের ছেলে পৃথ্বীরাজের , নিজের ছেলে আকবরের , শাহজাহানের , ক্ষুদিরামের
আঁশ বটিটা ধরতে গেলেই মানা করে -- রক্তের ভয় পায়
দাঙ্গার রক্ত , ভাইয়ের রক্তের ।
জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে বুঝেছি
জাতীয় পতাকার রঙ তিন নয় , চার নয় , পাঁচ নয়
পুরো ছয় ----
পঞ্চমটা যদি দাঙ্গার হয় , শহীদের হয়
ষষ্ঠটা ভালোবাসার , ভাতৃত্বের , মানবিকতার ।
আমি বিদ্রোহী । ঠিকই শুনেছেন আমি বিদ্রোহী ।
কিন্তু এই ছ ছ'টি রঙের বাইরে নয় ।
২০।।
আমার বিদ্রোহী চোখ দেখছে
দেশের মধ্যে জ্বলে ওঠে
স্ফুলিঙ্গ ----
আমি দেখেছি
সরকার গঠনের নামে গজিয়ে ওঠা
লেনদেনি শৃঙ্গ ---
আমি দেখেছি মূর্খ জনতা
ফিরে আসে অসহায়
ব্যালটের যুদ্ধ হেরে ---
আমি দেখেছি চাঁদ এখানে
কবিতা লেখে
নিজের কলঙ্কের অমাবস্যার রাত্তিরে ।
বিপদের ঘন্টা বেজেছে
ঢাক থেকে মাদলের কম্পনে
মানুষ মরেছে মেকি আদর্শে পকেট ভরেনি ,
পেট এর রক্ত মুখ দিয়ে বয়ে গেছে শুধু ।
এখানে প্রতিদিন মিসেছে গঙ্গার স্রোত যমুনার জলে
এখানে প্রতিদিন মরেছে হি-মু , দাঙ্গার কোলাহলে ।
মানুষের আয়ু ক্ষণস্থায়ী , নেতৃত্ব দীর্ঘজীবী
কৃষকের দড়ি ঝুলছে গলায় , শ্রমিকের বৃত্তি ভিখারি প্রভু ।
আমার বিদ্রোহী বন্ধুগণ ,
আর সময় নেই ফ্যাসিবাদ , সাম্যবাদ , মার্কসবাদ বোঝাবার
এখন বিদ্রোহী মন , গর্জে ওঠো ;
নিজেকে করো আদর্শের চেয়ে বলিয়ান ।
২১।।
আমি বিদ্রোহী
পথে পথে ঘুমিয়ে পড়ে সামন্ত্রদের লাশ
আগুনের পরশমনির ছোঁয়ায় জেগে থাকে
স্বপ্নভর্তি আকাশ ।
যৌনতা মারে না আর , বাঁচতে শেখায় অন্ধকার
কলমের ঘোমটার আড়ালে , অধিকাংশেই
ব্যবসায়ের সম্প্রচার ।
একদিকে নিজের সৃষ্টি তুলে দিতে পাঠকের হাতে
লেখক খোঁজে প্রকৃতকে , গ্রহণের কালো প্রভাতে ।
অন্যদিকে ভয়াল বিষ , ফনায় তুলে নেয় যারা
লেখক নামে ব্যবসা ছড়ায় ;
সম্মান ব্যাচে তাদের শিষে সাহিত্যের বসুন্ধরা ।
কেন তাদের মিথ্যা সম্মান প্রদান ?
কেন তাদের এওয়ার্ডে বস্তা ভরা নাম ?
কেন পারে বলতে , কলঙ্ক তোমরা
তোমাদের দুমুখো সৃষ্টি , ছুঁয়ে দেখাও পাপ ।
আমরা ধন্য , গর্বিত তার চেয়ে অনেক অনেক
আজও বেনামি , ছোট লেখক - আমাদের সাথে জড়িয়ে ,
আজও পাঠকদের বন্ধু ভেবে নিই আপন করে
আজও কথা আর কালি থাকে , আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ।
আজও অপেক্ষা করি একটা সেলফি সবার সাথে
আজও অপেক্ষা করি স্বাক্ষর নয়
পরিচয় হবে আড্ডায় আড্ডায় ।
আর ওই বক তপস্বীর হোক সমনাম
কোন সমরেশ অথবা দুঃখের কবিতা বা গান ।
আমি বিদ্রোহী । বিদ্রোহ করি কবিতায় ।
বিদ্রোহ করি সৃষ্টির অস্ত্র হাতে নিয়ে ।
কিন্তু আজ বিদ্রোহ নয় , বরং অনুশোচনা হোক
আজ কবিতার মৃত্যু হয়েছে বইমেলার মাঠজুড়ে ।
২২।।
আমি বিদ্রোহী
আমরা সমব্যাথি নই । আমাদের তো ব্যাথা লাগে নি কোথাও ।
যন্ত্রনা হয় নি আমাদের একফোঁটাও
কোন রকম আঘাতে ।
আমরা যন্ত্রনা বলতে এখনো চিনি ,
কাঁটা তারে বল কুড়োতে গিয়ে কেটে যাওয়া
আর ওরা কাঁটা তারের পাশে রাত জেগে থাকে
বোমা কুড়াবে বলে ।
আমরা চাকরি করলে সুখ খুঁজি
আর ওরা দুঃখ জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিদিন
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে ।
একদিকে ভালোবাসার দিবসে আমাদের মধ্যে চলে
প্রেম নিবেদন ।
অন্যদিকে ওরা ভালোবেসে জীবন দিয়ে চলে যায় ।
আমরা তাদের নখের আঘাতটুকু অনুভব করি কখনো
সমব্যাথি হবো আমরা কি করে ?
কিন্তু আমার বন্ধুরা
আমরা মৃত্যু দেখেছি । রক্ত দেখেছি । সহ্যসীমা পার হয়ে গেছে ।
এবার তাই পথে নেমেছি । তান্ডব দেখবো বলে ।
আজ কতটুকু সুরক্ষিত আমরা ? কতটুকু সুরক্ষায় আমাদের সন্তান ? ভোট আসে , ভোট যায়
প্রতিশ্রুতি হাজার বন্যা হয়ে ভাসিয়ে দিয়ে যায়
রাজনৈতিক দল ।
কিন্তু বন্ধু ,
প্রতিশ্রুতি রাখতে দেখলাম না তো কাউকে । উল্টে আমাদের ভোজ্য টুকুও
ওরা খেয়ে এলো জন্মদিনের আড়ালে ।
তাই বন্ধু ,
চলো আজ থেকে নিজেরা বদলে ফেলি নিজেকে
ধর্ম , বর্ণ , জাত ভুলে
চলো আহবান করি একটা সাম্রাজ্যের ।
রক্তবীজ হয়ে ওরা পথে নেমেছে
আমরাও রক্তবীজ নিধন যজ্ঞে নিজেদের
ছিন্নমস্তা গড়ে তুলি ।
বন্ধু , আর কথা নয়
এবার অশুভ সব রক্তপানের সময় হল
আমি বিদ্রোহী , তবে অন্যায়ের সাথে এ যুদ্ধে
আমি হিংস্র , রক্তভোজী একটা জিভ ।
২৩।।
আমি বিদ্রোহী
আমি ধর্মের প্রাচীরে অধর্মের গন্ধ পাই
মানুষের মাঝখানে আর ঈশ্বর তাই খুঁজি নাই
আমি পাই ঈশ্বর পাথরের সমাধি স্তূপে
পাই না প্রকৃত মানুষ দাঁড়িয়ে ঈশ্বর রূপে ।
কে হিন্দু ? কে মুসলমান ? কে ইহুদি ? কে ক্রিস্টান
জৈন , বৌদ্ধ , মহান
আমি পাই না দেখতে ভিন্ন মাটির রং
চাপিয়ে বুকে তার কাঁটাতার ।
আমি দেখতে ছুটি সিনেমা , ব্যবসায় মাখা
দেখতে গিয়েও পাইনা দেখা , মুখোশের আড়ালে মানুষের
মুখ ঢেকে থাকা ।
আমি ভেদে নয়, একতার ধৃষ্টতা করি বারবার
দেশ দ্রোহের তকমা মাথায় , করি পৃথিবী প্রতিদিন পারাপার
আমি দেখেছি মানুষ , ঘুমিয়ে আনন্দে কাকের গান শুনে
আমি দেখেছি মানুষ , ফেলে দেয় শিল্পীর আসল শিল্প
নাক ব্যাকানো কেতাবি ঢঙে ।
আমি দেখেছি শ্রমিকের রক্তে রঙিন হয়
সমাজের রেলগাড়ি
মালিকের কালো হাত আমি দেখি করে
গরিবের ঘাম চুরি
তবু নীরব থাকি , চুপচাপ সয়ে যাই ভয়ে
হয়তো হিন্দু বলবে , তুমি কাশভ সন্তান
মুসলিম বলবে , তুমি আল্লাহর সন্তান নয় ।
গঙ্গা জানেন আজও বন্দি
শিবের ওই বুড়ো এলকেশে
লক্ষ্মী জানেন আজও বসে
নারায়নের বৃদ্ধ চরণে ।
আর কতদিন স্বাধীন দেশে মানুষের
স্বাধীনতা থাকবে হয়ে এক প্রহসন
আর কতদিন ধরমের আড়ালে মানুষ
সইবে জিহাদি অপমান ।
আর কতবার অবতার আসবে নেমে
মৃত্যুর এই দেশে
আর কতবার গাঁজা টেনে ঘুমাবে যৌবন
বুড়ো শিবের নামের আবেশে ।
অনেক তো হল
অনেক দিন তো পেরিয়ে গেল
একবার তো পরিবর্তন হয়ে যাক ।
আর কতকাল সেই আল্লাহ , সেই ভগবান , সেই যীশু
ভাগ্য বিধাতার পাবে প্রশ্রয় ।
এবার তরুণ রক্তে হোক কোন তরুণ অবতার
না হয় আবার শুনবে তিন বিশ্ব
যুদ্ধের হুংকার ।
লন্ড ভন্ড হয়ে যাক সৃষ্টি
ক্ষোভের আগুনে
সৃষ্টি হোক মঙ্গল , বর্তমান অমঙ্গল ভবনে ।
২৪।।
হরিণের মতো ঘর্মাক্ত পথ ছুটছে
থেমে আসছে ঘড়ির কাঁটা
ফ্যাকাসে আকাশ ঘাম মেখে বসে
রোদের আলো ছুঁয়ে বৃষ্টি নামুক
দুপুর জোছনায় ।
আজ চাই না আপনজন ,
সবাইকে পর করে পেড়িয়ে যায় আইন
আমার পাশের বাড়ির গোয়াল ঘরে
গরুগুলো ডাক ছাড়ে , গলা ছেড়ে
ঘুম ভেঙে দেখছি, বুঝেছি ধীরে ধীরে
ওরা ছাড়া এ দেশে আর কেউ ভারতীয় নয় ।
সাদা হিমালয়ের গলায় সাপ জড়িয়ে আছে
ঠিক যেন সৈনিক , সকালের গেরুয়া আলোতে
কফিন বাঁধা ।
কাল রাতে মৃত্যুর শীতল দুটো হাতে
কেড়ে নিয়ে গেছিল ওদের সমস্ত পরিবার ।
আজ তারাও দাঁড়িয়ে নাগরিক পঞ্জিকায়
সরণির ধারে মিছিলে নেমেছে যেখানে হাজার হাজার
উদ্বেগ , উৎকণ্ঠা ; ছিল যত বন বাদার
এদো গলির কোনা খামচায় ।
আর কিছুক্ষন
নতুন পাঠশালা সামনে দাঁড়িয়ে আমার
জাতীয় পতাকার রঙ স্পষ্ট চোখে দেখলাম
তিন নয় , চার নয় কেবল এক ।
এদেশের জন্য দেশভক্ত শহীদ হওয়া যায়
দেশভক্তি আজ শুধুই প্রথম বর্ণের অনাচারজাত অধিকার ।
কি বিচিত্র রামায়ন না ! কি বিচিত্র ধর্মের নামে প্রহসন
ঘুম ভাঙলো যখন , বুঝলাম তখন
রাম নয় ; হনু ছাড়া এ দেশে আজ আর
একটিও ভারতীয় নাই ।
২৫।।
প্রত্যেক ছুটির জন্য দায়ী তারা , যারা বিচারক তো হয়ে বসে আছে সিংহাসনে । কিন্তু বিচার করার জন্য কতজন , নিজের বুকে হাত রেখে বলুক , একবার পাতা উল্টেছে গুণীজনের । সবার তালিকা ইয়া লম্বা , হাতে গোনা কিছু নাম । আরে নাম বড় না সৃষ্টি , তুমিই বলো ভগবান । কতজন গুণী এ অভাগা দেশে কদর পায় , গেঁয়ো যোগিরা অভাগা এ দেশে ভিক কুড়িয়েই একদিন হারিয়ে যায় । লবিবাজ আজ কাদের বলি , আমরাই তো লবি বানাই । আরে , নাম বড় না সৃষ্টি , তুমিই বলো ভগবান ।
সবাই বলে , একে দেখো , ওর মতো হও । কতজন আজও ভেবে বলো তো সৃষ্টির রসে ডুবতে চাও ? তুলনা করে গেলে , সারাটাজীবন ; আরে , লবিবাজ তো তোমরাই বানাও
কোন সাহসে বিচারক তুমি , লবিকে আজ ফাঁসির বাণী রোজ শোনাও ।
বলো , বলো , নিজেরাই । ভাবনা শুরু করো আজই । নাহলে বিপদ ঘনিয়ে আসবে সবার ... সেদিন লবি নয় তোমরাই ঝুলবে , ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে ।